বর্তমানে সামাজিক ব্যাধির আরেক নাম কিশোর গ্যাং। সমাজের যতরকম অপরাধ রয়েছে সকল অপরাধের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা। সাধারণত মাদকাসক্ত, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ডাকাতি, চুরি, হামলাসহ নানারকম ছোট-বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে রয়েছে তারা। ১০-১৫ জন কিশোর মিলে গ্যাং তৈরি করে রাস্তাঘাট, পাড়ার বিভিন্ন মহল্লায় চলাফেরা করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে তারা। প্রায়ই কিশোর গ্যাংদের মধ্যে দলাদলির কারণে ঝগড়া-ঝাটি ও মারধরের ঘটনা ঘটে, যা এলাকাবাসীর মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্ট্রাগ্রাম রিলস, টিকটক এবং লাইকিতে বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্র দেখিয়ে অসহনীয় ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছে কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা। তাদের এসব ভিডিও কনটেন্টে দেখা মিলে নানা হুমকি-ধামকি। এসব হুমকি-ধামকি একজন আরেকজনকে এবং এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে উদ্দেশ্য করে বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে। এসব ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে এসবে।
শিশুর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ ও শাস্তি বিষয়ে উক্ত আইনের ৩৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে (১) অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করা যাইবে না : তবে শর্ত থাকে যে, কোন শিশুকে যখন এইরূপ কোন মারাত্নক ধরনের অপরাধ সংঘটন করিতে দেখা যায় যে, তজ্জন্য এই আইনের অধীন প্রদানযোগ্য কোন আটকাদেশ আদালতের মতে পর্যাপ্ত নহে, অথবা আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে শিশুটি এত বেশি অবাধ্য অথবা ভ্রষ্ট চরিত্র যে তাহাকে কোন প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা চলে না এবং অন্যান্য যে সকল আইনানুগ পন্থায় মামলাটির সুরাহা হইতে পারে উহাদের কোন একটিও তাহার জন্য উপযুক্ত নহে, তাহা হইলে শিশু-আদালত শিশুকে কারাদণ্ড প্রদান করিয়া কারাগারে প্রেরণের জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে :
আরও শর্ত থাকে যে, এইরূপে প্রদেয় কারাদণ্ডেরর মেয়াদ তাহার অপরাধের জন্য প্রদেয় দণ্ডের সর্বোচ্চ মেয়াদের অধিক হইবে না : আরও শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ কারাদণ্ডে থাকাকালীন যেকোন সময়ে শিশু-আদালত উপযুক্ত মনে করিলে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে যে, এইরূপ কারাদণ্ডে আটক রাখিবার পরিবর্তে অভিযুক্ত শিশুকে, তাহার বয়স ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত, কোন প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে আটক রাখিতে হইবে।
আইনের ৩৪ ধারায় উল্লেখ আছে, যেকোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে শিশু-আদালত তাকে অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে আটকাদেশ প্রদান করে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখার জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে। উক্ত ধারার উপধারা (৩) উল্লেখ আছে, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দস্যুতা বা মাদক ব্যবসা বা অন্য কোন গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত শিশুর বয়স ১৮ (আঠার) বৎসর পূর্ণ হইলে এবং মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকিলে অথবা উল্লিখিত অপরাধের মামলায় আদালতের আদেশ অনুযায়ী আটকাদেশপ্রাপ্ত শিশুর বয়স ১৮ (আঠার) বৎসর পূর্ণ হইলে, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বা প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, শিশু-আদালতের অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে কেন্দ্রীয় বা জেলা কারাগারে প্রেরণ করিবে।
কিশোর গ্যাং তথা কিশোর অপরাধ নির্মূল করতে প্রচলিত আইন সংস্কার করে কার্যকর ও কঠোর আইন তৈরি করা উচিত। আইন সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারিক সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।