বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ও চাহিদার ঘাটতি

বিশ্ববাজারে আজ (মঙ্গলবার) সকালে জ্বালানি তেলের দাম আবারো বেড়েছে। হিজবুল্লাহ বাহিনীর প্রধান ইসরায়েলের হামলায় নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তেলের বাজারে এর প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। বাজারে তেলের চাহিদা হ্রাস এবং সরবরাহের বৃদ্ধি মূলত দামকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, আজ সকালে ডিসেম্বর মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩ সেন্ট বেড়ে ৭১.৮৩ ডলারে উঠেছে। অন্যদিকে, নভেম্বর মাসের চুক্তির জন্য ডব্লিউটিআই (WTI) ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১ সেন্ট বেড়ে ৬৮.২৮ ডলারে পৌঁছেছে।

তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে এ বছর বাজার নিম্নমুখী হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি এই অবস্থার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা কমে গেছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনের তেল আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

চীনের উৎপাদন কার্যক্রমও টানা পাঁচ মাস ধরে হ্রাস পাচ্ছে, যা তেলের বাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, সেপ্টেম্বরে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৯ শতাংশ কমেছে, যা টানা তিন মাস ধরে দাম কমার ইঙ্গিত দেয়। ২০২২ সালের নভেম্বরের পর থেকে এত বড় মূল্যহ্রাস আর দেখা যায়নি। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যহ্রাস। একই সময়ে, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম গত মাসে ৭ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ১৬ শতাংশ কমেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর সংঘাত শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইরান এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ হিজবুল্লাহ বাহিনীকে ইরান সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরান ওপেকের অন্যতম প্রধান সদস্য। যদি ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাজারের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

আজ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও সীমিত পরিসরের হামলা চালিয়েছে। এই হামলার কারণে অঞ্চলের উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, তেলের বড় উৎপাদনকারী দেশগুলো এই বছরের মধ্যেই উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এএনজেড অ্যানালিস্টদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও, ওপেকের তেল উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে বাজারে তেলের দাম খুব একটা বাড়ছে না। তেলের বাজারকে স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা চলছে এবং এ কারণে তেলের দাম সব সময় এক ধরনের চাপের মুখে রয়েছে।

গত দুই বছর ধরে তেল উৎপাদন ছাঁটাইয়ের পর, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ওপেক দৈনিক ১ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম আরও স্থিতিশীল হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুতও কমছে। রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত ২১ লাখ ব্যারেল কমেছে। এই মজুত হ্রাসও তেলের বাজারে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে তেলের দামে প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা, চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ওপেকের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলো মিলিয়ে তেলের বাজারে একটি মিশ্র চিত্র তৈরি হয়েছে। যদিও সামান্য মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবে বাজার স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Tags

- Advertisement -