অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন আমেরিকান অর্থনীতিবিদ

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অর্থনীতিতে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন অর্থনীতিবিদকে। তারা হলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড্যারন আসেমোগলু, একই প্রতিষ্ঠানের সায়মন জনসন এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক জেমস রবিনসন। তাদের গবেষণা সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং তা কিভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

নোবেল কমিটি তাদের পুরস্কার ঘোষণায় উল্লেখ করেছে যে, সমাজের ভিতরে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা এবং শোষণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবৃদ্ধির পথ রোধ করে। এই তিন অর্থনীতিবিদ তাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য মূলত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গঠন ও কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। তাদের কাজ সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেছে, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

ইউরোপীয় উপনিবেশের সময় প্রতিষ্ঠিত নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান এবং তার ফলে সমাজের উপর প্রভাবিত মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। কমিটি জানায়, অতীতে ইউরোপীয়রা যখন বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে, তখন অনেক স্থানে শোষণমূলক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। অন্যদিকে, কিছু স্থানে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে সেখানকার জনগণের দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির পথে সহায়ক হয়ে ওঠে।

সার্বিকভাবে, এই তিন অর্থনীতিবিদের কাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করেছে: কিভাবে কিছু দেশ স্থিতিশীল আর্থিক প্রবৃদ্ধির দিকে এগোতে পারে, আবার কিছু দেশ শোষণমূলক ব্যবস্থায় আটকে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি দেশের উন্নতি এবং এর অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিহার্য। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি স্বল্পমেয়াদী লাভ দেয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি ঘটাতে সক্ষম নয়।

যুগের চাহিদা অনুযায়ী, আজকের বিশ্বে আয়ের বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই বৈষম্য কমানোর জন্য কীভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে, তা বোঝা জরুরি। তাই, আসেমোগলু, জনসন ও রবিনসনের গবেষণা কেবল তাত্ত্বিক নয়, বরং তা বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন।

গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন। এ বছরের পুরস্কারজয়ীদের গবেষণা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, উন্নয়নের পথ নির্মাণে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ

Tags

- Advertisement -