অর্থ পাচার রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সমন্বিত উদ্যোগ

অর্থ পাচার ঠেকাতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ, বিশেষ করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দুর্নীতি-বিরোধী ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক শেলবি স্মিথ-উইলসনের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরেকটি দৃষ্টান্ত। রোববার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, এই আলোচনায় দুর্নীতি মোকাবিলা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

উভয় দেশের মধ্যে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তির প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, এবং গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান বিনিময় ত্বরান্বিত করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

এমন এক সময় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো, যখন অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে অর্থ পাচারের প্রেক্ষাপটে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনাও গৃহীত হয়েছিল।

সরকারের তথ্যমতে, দেশে এবং বিদেশে পাচার হওয়া ও আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। তবে প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণের জন্য কাজ চলছে। সিআইডি, দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ-র সমন্বয়ে এই পাচার রোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন শুরু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রধান ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন।

বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে অবশিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণে অডিট কার্যক্রমও শুরু হবে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকও এই প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে জড়িত। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাব অনুযায়ী, গত দেড় দশকে ১৯টি ব্যাংকের ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই আলোচনার মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে।

Tags

- Advertisement -