আন্দোলনকর্মী থেকে হলিউড অভিনেত্রী হান্টার শেফার

হান্টার শেফার, একজন অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে থেকেই সক্রিয় ছিলেন সামাজিক আন্দোলনে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ‘দ্য পাবলিক ফ্যাসিলিটিজ প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বা এইচবি২-এর বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদই তাকে প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এই বিতর্কিত আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাবলিক বাথরুমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, যা বিশেষভাবে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেফার এই আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ দুই বছরের লড়াইয়ের পর, ২০১৮ সালে এইচবি২ বাতিল করা হয়।

শেফারের এই লড়াই শুধু আইনি ক্ষেত্রেই নয়, বরং তার জীবনের প্রতিফলন ছিল। একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে শৈশব থেকেই নিজের পরিচয় নিয়ে সংগ্রাম করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত এই অভিজ্ঞতাগুলোই তার অভিনয় জীবনে প্রভাব ফেলেছে। ২০১৯ সালে এইচবিওর বহুল আলোচিত টিভি সিরিজ ‘ইউফোরিয়া’-তে তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আসে, যেখানে তিনি ট্রান্সজেন্ডার চরিত্রের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠেন। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং সমালোচকদের কাছেও প্রশংসা কুড়ান।

কিন্তু শেফারের অভিনয়গুণ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরের বছরগুলোতে তিনি আরও বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ২০২2 সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য হান্টার গেমস: দ্য ব্যালাড অব সংবার্ডস অ্যান্ড স্নেকস’ ছবিতেও তিনি চমৎকার অভিনয় করেন। এরপর, ২০২৩ সালে তাকে দেখা যায় দুই ভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে, যা তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

প্রথমেই আসা যাক ‘কুকু’ সিনেমার কথায়। টিলম্যান সিঙ্গার পরিচালিত এই হরর সিনেমাটি আল্পস পর্বতমালার পটভূমিতে নির্মিত। প্রধান চরিত্র গ্রেচেন, যিনি মাকে হারিয়ে জার্মান আল্পসের এক রিসোর্টে বাবা ও সৎমায়ের সঙ্গে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে অপ্রত্যাশিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মুখোমুখি হয়ে ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে গ্রেচেন। এই চরিত্রে শেফারের অভিনয় ছিল দারুণভাবে প্রশংসিত। ছবিটি প্রথমবার প্রদর্শিত হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে এবং পরে আগস্ট মাসে মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে।

অন্যদিকে, শেফারের আরেকটি বড় কাজ হলো ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’। এই ছবিটি নির্মাণ করেছেন খ্যাতনামা পরিচালক ইয়োর্গস লান্থিমোস। এখানে তিনি এমা স্টোন, মার্গারেট কোয়ালি, জেসি প্লেমনস এবং উইলেম ডাফোর মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ছবিটি ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার লাভ করে। শেফারের অভিনয় এখানেও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

যদিও শেফার অভিনয়ের প্রথাগত কোনো প্রশিক্ষণ নেননি, নিউইয়র্কে মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। তার ইচ্ছা ছিল ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করার। তবে ‘ইউফোরিয়া’ সিরিজে অভিনয় তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি ডব্লিউ ম্যাগাজিনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি এখন মডেলিং থেকে অনেকটা সরে এসেছি। অভিনয় বেশি উপভোগ করছি। নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি।”

তবে, শেফার এখন কেবল অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান। যদিও তিনি একজন সামাজিক আন্দোলনকর্মী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন, সেই পরিচয়টিকে তিনি পেছনে ফেলে দিয়েছেন। তার মতে, “আমি অল্প বয়সেই প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি, কিন্তু এখন আমি মন দিয়ে অভিনয়টাই করতে চাই।”

অভিনয় এবং মডেলিং ছাড়াও শেফারের পরিচালনায় আগ্রহ রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি একটি মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেছেন, যা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি সূচনা বলা যেতে পারে।

হান্টার শেফারের এই যাত্রা শুধু তার অভিনয় প্রতিভার নয়, বরং তার সংগ্রামী জীবন এবং সামাজিক আন্দোলনের প্রতিফলন। তিনি হলিউডে তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সম্ভাবনাময় একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এবং তার কাজগুলো আগামীর জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করছে।

Tags

- Advertisement -