এনবিআরের চিঠিতে আটকা পড়ল বড় শিল্পগ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা, ওরিয়ন, সামিট, বেক্সিমকো, এস আলম, নাসা এবং নগদ লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তর (ক্রয়, বিক্রয় ও দান) সাময়িকভাবে স্থগিত করার সুপারিশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর ফাঁকি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকায় এনবিআর এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এর মহাপরিচালক আহসান হাবিব গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে আজ, ২ অক্টোবর। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ২২৩ ধারা অনুযায়ী, কর ফাঁকি রোধে সম্পত্তি অবরুদ্ধকরণের ক্ষমতা এনবিআরের রয়েছে। তদন্তাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গুরুতর কর ফাঁকি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় এনবিআর এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

ইতোমধ্যে, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসা গ্রুপের মালিকদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। এসব ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব তলব করার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, এবং সঞ্চয় অধিদপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানাধীন ব্যবসায়ীদের তালিকায় রয়েছেন:বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম।

সিআইসি পরিচালিত এই বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এনবিআর জানায়, সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে আয়কর আইন, ২০২৩ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এনবিআরের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদক তদন্ত চালাচ্ছে।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে দুদক তদন্ত শুরু করে। উচ্চ আদালতের আদেশে এ অনুসন্ধান সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল, তবে আপিল বিভাগের নির্দেশের পর পুনরায় অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, এস আলম গ্রুপের অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকা ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগেও তদন্ত চলছে।

দুদক ইতোমধ্যে ব্যাংক লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত ১১টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের এ যৌথ অভিযান দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও আর্থিক অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উন্মোচনের পথে রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের কর আদায়ের স্বচ্ছতা ও বৈধতার স্বার্থে এনবিআর ও দুদক এ অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

Tags

- Advertisement -