“ওরা এগারো জন”: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে চাষী নজরুল ইসলামের একটি কাল্পনিক কাহিনী

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের জগতে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। এই বছরেই মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র “ওরা এগারো জন”। এটি একটি স্বতন্ত্র প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি ছবি যা মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ফুটিয়ে তুলেছে। সিনেমাটি ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় এবং এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে একটি নতুন ধারার সূচনা ঘটে।
চাষী নজরুল ইসলামের ক্যারিয়ার এবং জীবন-যাপন সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হলে, এটি আরও পরিষ্কার হবে কেন এই চলচ্চিত্রটি তার জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে। চাষী নজরুল ইসলাম, যিনি মূলত একজন বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালক হিসেবে পরিচিত, মুক্তিযুদ্ধের অগণিত গল্প ও সত্যকে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি । তার পরিচালনায় “ওরা এগারো জন” মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি হলেও, এটি শুধুমাত্র একটি যুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং একটি জাতির সংগ্রাম, সাহসিকতা এবং আত্মদানের চিত্র ।
চলচ্চিত্রটি একটি বিশেষ দলের কাহিনী নিয়ে গড়ে ওঠে। দলের সদস্য সংখ্যা এগারো জন হলেও, এটি কোনো নির্দিষ্ট বাহিনী বা ইউনিটের পরিচায়ক নয়। বরং, এই এগারো জন মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে চাষী নজরুল ইসলাম সেই সময়কার মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ছবির মূল বিষয়বস্তু হল, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক জীবনের বিবরণ।

সিনেমার প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অভিনেতা শাবানা, রাজ্জাক, খসরু, মুরাদ, নান্টু এবং অন্যান্যরা। তাদের অভিনয় এবং স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের নানান দিককে প্রভাবিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ছবির মাধ্যমে চাষী নজরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ়তা, সাহস এবং তাদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কাহিনীকে তুলে ধরেছেন।
চলচ্চিত্রটির কাহিনী মূলত একটি বিশেষ দলের অভিযানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এগারো জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল একটি গোপন মিশনে রত থাকে, যেখানে তাদের সামরিক কৌশল, সাহসিকতা এবং নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিশন সম্পন্ন করার গল্প দেখানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এমন একটি কাহিনী চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়ার মাধ্যমে চাষী নজরুল ইসলাম তার সময়ের জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
চাষী নজরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, সিনেমাটি নির্মাণের সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনাগুলোর সঠিক এবং বাস্তব চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাই, তিনি সেই সময়কার প্রতিটি ঘটনাকে বাস্তবতার সাথে মেলে এমনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
সিনেমার সঙ্গীত এবং চিত্রগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। এই ছবির সঙ্গীত, যা মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পটভূমির সাথে মিলে যায়, তা সিনেমার আবেগপূর্ণ দিকগুলোকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছে। চিত্রগ্রহণের ক্ষেত্রে চাষী নজরুল ইসলাম বাস্তবতার প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন, যা সিনেমার প্রামাণিকতা বাড়িয়েছে।

“ওরা এগারো জন” চলচ্চিত্রের মুক্তি পরবর্তী সময়ে এটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রেমীদের মধ্যে প্রশংসিত হয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের চিত্রায়নে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয় এবং চাষী নজরুল ইসলামের দক্ষ পরিচালনার জন্য সবার প্রশংসা কুড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ছবির হিসেবে এটি একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
সর্বোপরি, “ওরা এগারো জন” শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি জাতির ইতিহাস, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের গল্প। চাষী নজরুল ইসলামের নির্মাণশৈলী এবং তার চলচ্চিত্রের কাহিনীর গভীরতা মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে এবং আজও এটি দর্শকদের কাছে এক অভূতপূর্ব চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত।

Tags

- Advertisement -