গোটা মধ্যপ্রাচ্য অশান্তিতে: নেতানিয়াহুর আগ্রাসী নীতি

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভূবিভাগ ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, আর এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত এক বছরে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি, এখন লেবাননে একটি নতুন সংঘাত শুরু হয়েছে, যা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামলা চালায়, যার ফলে শীর্ষ প্রতিরোধ যোদ্ধা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। এই হামলায় সহস্রাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন, যা লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে শনিবার রাতে বাগদাদসহ ইরাকের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, এবং তারা মার্কিন দূতাবাস দখলের চেষ্টা করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

নেতানিয়াহুর এই বেপরোয়া হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নিন্দা জানিয়েছে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে যে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি এবং হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অশান্তির পেছনে আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহ একটি বড় কারণ। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ ক্ষমতাধর দেশ, যেমন সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।

গত বছরের ৭ অক্টোবর, গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালায়, যা ইসরায়েলি তাণ্ডবের সূচনা করে। এই হামলার ফলে লেবানন এবং ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরপর থেকেই নেতানিয়াহু যুদ্ধের আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রেখেছেন।

বিশ্বনেতারা নেতানিয়াহুর বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছেন। জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে, তাদের কাছে নেতানিয়াহুর কর্মকাণ্ড যেন মোমের পুতুলের মতো।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জনগণের কান্না এবং দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ হলেও, কার্যত কোনো দেশ থেকে সাহসী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতি চলতে থাকলে, অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে এবং মানবিক বিপর্যয় হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর উচিত সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কাজ করা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের উচিত এই সংকট সমাধানে একটি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, অন্যথায় তা মানবতার জন্য একটি কালো অধ্যায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Tags

- Advertisement -