টাকা আয়ের শর্টকাট পথ আছে কি?

যাদের মনে শর্টকাট পথে টাকা আয় করার চিন্তা রয়েছে, তারা প্রায়ই অপরাধমূলক কাজ বা অনৈতিক পথে চলে যান। এগুলো সাময়িকভাবে অর্থ এনে দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এতে সমাজ এবং নিজের জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

মানুষের জীবনে টাকা আয়ের প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। সবাই চায় অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, আর্থিক নিরাপত্তা এবং জীবনের মান উন্নত করতে। তবে টাকা আয়ের কোনো শর্টকাট পথ কি সত্যিই আছে? উত্তরটা সরল হলেও গভীর অর্থবহ — না। টেকসই আয়ের জন্য কোনো শর্টকাট পথ নেই।

আমরা অনেকেই ভাবি, হয়তো কোনোভাবে লটারি জিতে ধনী হয়ে যাব, অথবা ধনী পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে সহজে অর্থের মালিক হব। কিছু ক্ষেত্রে এমনটা সত্যি হলেও, এগুলো আসলে ‘আয়’ নয়। এগুলো হলো ভাগ্যের খেলা, যা কেবল অল্পসংখ্যক মানুষের জীবনে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, লটারি জেতা বা ধনী ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়া এমন কিছু ঘটনা, যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য বাস্তবতা নয়। এগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের জীবনে ঘটে; তবে তাতে পরিশ্রম, দক্ষতা বা অর্জনের কোনো সংযোগ নেই।

এই ধরনের শর্টকাট পদ্ধতিতে ধনী হওয়া আসলে টেকসই নয়, কারণ এতে আপনি টাকা আয় করছেন না, বরং অন্যের দেওয়া অর্থের মালিক হচ্ছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত ধনী হওয়ার প্রলোভন বা শর্টকাট পথে সফল হওয়ার প্রলোভন অনেক সময় মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়; যেমন অবৈধ উপায়ে টাকা আয় করার চেষ্টা।

যাদের মনে শর্টকাট পথে টাকা আয় করার চিন্তা রয়েছে, তারা প্রায়ই অপরাধমূলক কাজ বা অনৈতিক পথে চলে যান। কিছু মানুষ ধনী হতে গিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন; যেমন দুর্নীতি, চুরি বা প্রতারণা। এগুলো সাময়িকভাবে অর্থ এনে দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এতে সমাজ এবং নিজের জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রেই আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে মানুষ জীবনের শেষ পর্যন্ত সেই অপরাধের ফল ভোগ করেন।

ফোর্বসের তথ্যমতে, যারা শর্টকাট পথে ধনী হওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে ব্যর্থ হন এবং মানসিকভাবে হতাশায় ভোগেন।

টাকা আয়ের টেকসই পথ হলো সঠিক দক্ষতা অর্জন করা এবং পরিশ্রম করা। কোনো কাজই সহজ নয় এবং প্রত্যেকটি কাজের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন। আজকের পৃথিবীতে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি মানুষের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স, অনলাইন ব্যবসা, এবং সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে টাকা আয়ের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে, সেগুলোতেও সফল হতে হলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন।

যেমন ইলন মাস্ক বা জ্যাক মা-এর মতো সফল উদ্যোক্তাদের জীবনে কোনো শর্টকাট ছিল না। তারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে সফল হয়েছেন। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্থির করে পরিশ্রম করেন, তারা আর্থিকভাবে বেশি সফল হন এবং তাদের আয়ের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।আপনি যদি টাকা আয় করতে চান, তাহলে আপনাকে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং নিজের কাজে পারদর্শী হতে হবে। সফল মানুষরা তাদের কাজের জন্য প্রতিদিন নিজের যোগ্যতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করেন। আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় নতুন কিছু শেখার জন্য অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। লিঙ্কডইন লার্নিং বা কোর্সেরার মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন কোর্স করে আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারেন।

ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতভাবে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করেন, তাদের আয়ের বৃদ্ধি ২০-৩০ শতাংশ বেশি হয় এবং তারা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিকভাবে সফল হন।

টাকা আয় করার শর্টকাট পথ খোঁজার পরিবর্তে আমাদের উচিত সঠিক উপায়ে কাজ করা এবং ধৈর্য ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রমই সফল আয়ের একমাত্র টেকসই পথ। আপনি যদি নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হন এবং প্রতিদিন নিজের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করেন, তাহলে একদিন আপনি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছাবেন, যেখানে এক ঘণ্টায় আপনি যা আয় করবেন, তা অন্যরা এক বছরে আয় করতে পারবে না।

অতএব, টাকা আয়ের শর্টকাট পথ খোঁজার পরিবর্তে নিজের দক্ষতা বাড়ান ও সঠিক পথে কাজ করুন; দেখবেন, সফলতা একদিন আপনার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেবে।

লেখক: সাইফুল হোসেন- দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

Tags

- Advertisement -