তোষামোদির সাংবাদিকতা

সাংবাদিকতা একটি দেশের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। সঠিক তথ্য প্রদান, জনস্বার্থে কাজ করা, এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা সাংবাদিকতার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু, অনেক সময় সাংবাদিকতা তোষামোদি এবং পক্ষপাতদুষ্টতার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা গণমাধ্যমের সততা ও জনগণের বিশ্বাসের ওপর আঘাত করে।
তোষামোদির সাংবাদিকতা বলতে বুঝায় সাংবাদিকদের এমন আচরণ বা প্রতিবেদন যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের প্রশংসা করতে বা সমালোচনার পরিবর্তে অন্ধ প্রশংসা করতে উদ্যমী হয়।

অপ্রয়োজনীয় প্রশংসা: প্রধানত রাজনৈতিক নেতাদের, কর্পোরেট হোস্টদের বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অতিরিক্ত প্রশংসা।
বিষয়ভিত্তিক পক্ষপাত: বিশেষ কোনো পক্ষের সুবিধা-অসুবিধার দিকে ঝুঁকতে থাকা বা সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করা।
তথ্য লুকানো বা বিকৃতকরণ: প্রকৃত তথ্য বা ঘটনাবলী গোপন রাখা বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা।

তোষামোদি সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করে। যখন সংবাদ মাধ্যম সরকারের নেতাদের অতিরিক্ত প্রশংসা করে এবং সমালোচনাহীন থাকে, তখন তা সরকারের ভুল, দুর্নীতি বা অপকর্মকে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছায় না এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায়।
সাংবাদিকদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে। পক্ষপাতিত্বপূর্ণ প্রতিবেদন নির্বাচনী ফলাফল এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিস্কারতা নষ্ট করে।
অনেক সময় তোষামোদির সাংবাদিকতা পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থ কাজ করে। বৃহৎ কোম্পানি বা কর্পোরেট হাউসদের স্বার্থ রক্ষা করতে সাংবাদিকরা প্রচারণা চালান, যা সমাজে আস্থাহীনতা এবং নির্ভরযোগ্যতার অভাব সৃষ্টি করে।

তোষামোদির সাংবাদিকতার অনেক উদাহরণ দেখা যায় নানা দেশে। বাংলাদেশেও এরকম ঘটনার অভাব নেই। কিছু সংবাদমাধ্যমের আচরণ রাজনৈতিক দলের তোষামোদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সীমাবদ্ধ হতে পারে, যা তাদের রিপোর্টিংয়ের সঠিকতা এবং প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশেষ কিছু রাজনৈতিক নেতা বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সখ্যতার কারণে মিডিয়া রিপোর্টিং প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়।
সাংবাদিকতার নৈতিকতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত যাতে তারা পেশাগত দায়িত্বের প্রতি মনোযোগী থাকে এবং পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে চলতে পারে।
সংবাদমাধ্যমের মালিকানা ও অর্থনৈতিক উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত। এটা জনগণকে নিশ্চিত করবে যে সংবাদ প্রতিবেদনগুলো নিরপেক্ষ এবং অবাধ।
যদি সাংবাদিকদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বা তোষামোদি প্রকাশ্যে উঠে আসে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া, সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।

তোষামোদির সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকতায় তোষামোদি গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি একটি বড় হুমকি। এটি সমাজের সচেতনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাংবাদিকতার পেশাগত নৈতিকতা রক্ষা করতে এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি সংহত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এভাবে, গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের বিশ্বাস এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা সম্ভব।

Tags

- Advertisement -