নির্বাচনে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত : টাইমস ম্যাগাজিনে জয়ের মন্তব্য

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। ছাত্র ও জনতার ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পদ থেকে সরে যেতে হয়, এবং সেদিনই তিনি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারত পালাতে বাধ্য হন। তিনি এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন। এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার ইতোমধ্যে দুই মাস পার করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম দাবি হলো নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ।

এর মধ্যেই, শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। সম্প্রতি মার্কিন সাময়িকী টাইমস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, তার মা শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুবই হতাশ ও বিচলিত। তিনি মনে করছেন, গত ১৫ বছর ধরে তিনি যে উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করেছেন, তা এখন বিফল হতে চলেছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জয় স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচনে শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তা ঠিক করা হবে।

সাক্ষাৎকারে জয় আরও বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কোটা আন্দোলন নিয়ে তাদের পরিবারেও আলোচনা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলাকালে জয় নিজেই বলেছিলেন যে, সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থায় ৩০ শতাংশ কোটার পরিবর্তে তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, আন্দোলনের সময় তার মায়ের প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় কিছু ভুল হয়েছিল। তবে তিনি মনে করেন, অর্ধেকের বেশি হতাহত হওয়া সন্ত্রাসীদের কাজ ছিল এবং এই সন্ত্রাসীরা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গেও জয় টাইমস ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা আইনি বা বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়। তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ এখনো দৃঢ় এবং এটিকে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বর্তমানে এক অস্থির সময় পার করছে। শেখ হাসিনা অনুপস্থিত থাকলেও আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা মত প্রকাশ করছেন। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করলেও, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

Tags

- Advertisement -