পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘অপরাজেয় ও চিরন্তন’বললেন কিম জং উন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ব্যক্তিগত বার্তা পাঠিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। এই বার্তায় পুতিনকে তিনি ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পিয়ংইয়ং এবং মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব এ সম্পর্ককে নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, দুই দেশই নিজেদের স্বার্থের জন্য এই মিত্রতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ জানিয়েছে, কিম জং উন তার বার্তায় উল্লেখ করেন, রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ‘অপরাজেয় ও চিরন্তন’। তিনি বলেন, পুতিনের গত জুনে পিয়ংইয়ং সফরের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে। এই বন্ধুত্ব ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া (ডিপিআরকে) ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের শেকড় রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্ট্যালিন এবং কিম জং উনের দাদা কিম ইল-সাংয়ের আমল থেকে এ সম্পর্কের সূচনা। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করেছিল। পিয়ংইয়ং কখনোই চীনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে চায়নি, কারণ তারা চীনের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারেনি।

চলতি বছরের শুরুতে, পুতিন ও কিম একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, দুই দেশের যে কোনো একটির বিরুদ্ধে আগ্রাসন হলে, তারা একে অপরকে সাহায্য করবে। যদিও ‘আগ্রাসন’ বলতে তারা ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। এই চুক্তির পেছনে আসলে দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের মেলবন্ধন দেখা যায়। রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত থাকায়, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার পক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রমাণও পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনের জন্য কিমের সঙ্গে সম্পর্কটি কৌশলগত স্বার্থে গড়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পুতিনের অস্ত্র এবং সমর্থন প্রয়োজন, আর কিমের লক্ষ্য হচ্ছে তার বিশাল প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে লাভবান হওয়া। এর ফলে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। বিশাল প্রতিরক্ষা খাত এবং উৎপাদন ক্ষমতার কারণে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার যুদ্ধে সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের প্রভাব বাড়িয়েছে।

যদিও এই সমর্থনের অভাবে রাশিয়া যুদ্ধ চালাতে অক্ষম হবে না, তবে যুদ্ধকে দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুতিনের কিছু কৌশলগত সমর্থন প্রয়োজন। ‘জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজ’-এর পরিচালক জেফরি লুইস বলেন, কিম এবং পুতিন উভয়েই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বাইরে বিকল্প অংশীদারিত্বের নেটওয়ার্ক’ তৈরি করতে কাজ করছেন।

উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যকার এই নতুন মিত্রতা শুধু সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রভাব কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে।

Tags

- Advertisement -