প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ

বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্থাপত্যের একটি মূল্যবান অংশকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, ১৯ হেয়ার রোড, শিগগিরই সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা পেতে যাচ্ছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহায়তায়, এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার একটি গণঅভ্যুত্থানে বাসভবনটির কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি ড. রেফাত আহমেদ ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে বাসভবনটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। পুরাকীর্তি আইন-১৯৬৮ এর আওতায় বাসভবনটির মালিকানা ও ব্যবহারের অধিকার সুপ্রিম কোর্টের অধীনে রেখে ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এর ফলে ভবনটি দেশের একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হবে।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি ড. রেফাত আহমেদ। এতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলমসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাসভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে ৬ অক্টোবর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাসভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়, নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে ১৯ হেয়ার রোডের প্রধান বিচারপতির বাসভবন অন্যতম। ১৯০৮ সালে নির্মিত এই স্থাপত্যটি মোঘল ও ইউরোপীয় ধ্রুপদী স্থাপত্যের অনন্য মিশ্রণে গড়া। ১৯৫০ এর দশকের শুরুর দিক থেকে এটি প্রধান বিচারপতির বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করলে এর ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত গুরুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। এর সংরক্ষণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Tags

- Advertisement -