প্রবাসী আয়ে উচ্ছ্বসিত প্রবৃদ্ধি সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। এতে গত বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বা ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের মাস আগস্টের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি। আগস্টে প্রবাসী আয় ছিল ২২২ কোটি ডলার। তুলনামূলকভাবে, গত বছরের একই সময়ে (সেপ্টেম্বর ২০২৩) প্রবাসী আয় ছিল ১৩৩ কোটি ডলার। এ হিসেবে, প্রবাসীরা গত মাসে ৮০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) মোট প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৪১৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে। এর মধ্যে জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। মে মাসেও প্রবাসী আয় ছিল উল্লেখযোগ্য, যার পরিমাণ ছিল ২২৫ কোটি ডলার।
চলতি বছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে জুন মাসে, যা ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। এটি গত তিন বছরে একক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসার রেকর্ড, যা এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ডলার ছিল।
গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অর্থনৈতিক নেতৃত্ব আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে আর্থিক খাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডলার সংকট মোকাবিলায় আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমা বাড়ানো। আগের ১ শতাংশ সীমা বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করা হয়, যার ফলে ব্যাংকগুলো এখন ডলারের বিনিময় হার ১১৭ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করতে পারছে। ফলে প্রবাসী আয় সংগ্রহে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম কিছুটা বেশি দিতে পারছে, যা প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করছে।

এছাড়া, জুলাই-আগস্ট মাসে চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈধ পথে প্রবাসী আয় না পাঠানোর যে প্রচারণা ছিল, তাতে পরিবর্তন এসেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রচারণায় সাড়া দিয়ে এখন অনেক প্রবাসী বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, প্রচারণার প্রভাবের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের উন্নত ব্যবস্থাও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, প্রবাসী আয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও দৃঢ়ভাবে বাড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন।

Tags

- Advertisement -