ফোটন এর ৪ লক্ষ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা গবেষণার এক নতুন দিগন্ত

বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা ও উদ্ভাবনকে আরও নিখুঁত এবং সহজতর করার জন্য কাজ করে চলেছেন। রসায়ন থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞান—সব শাখাতেই আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি গবেষণার কাজকে আরও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। পদার্থবিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ আলোর গবেষণায় ফোটন কণার বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোটন হলো আলোর মৌলিক একক যার কোনো ভর বা আধান নেই এবং এটি মহাবিশ্বের দ্রুততম কণার মধ্যে একটি।

আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স—বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ফোটনের বিশ্লেষণ অপরিহার্য। ফোটনের গঠন এবং কার্যপ্রণালী বুঝতে সুপার কন্ডাক্টিং ন্যানোওয়্যার সিংগেল-ফোটন ডিটেক্টর (SNSPD) নামের একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে যা ফোটন কণাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম।

SNSPD এমন একটি প্রযুক্তি যা একক ফোটন কণার উপস্থিতি শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। এতে সুপার কন্ডাক্টর বা অতি প্রবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা তাপমাত্রা কমিয়ে নির্দিষ্ট এক অবস্থায় নেওয়া হয়। যখন ফোটন এই ন্যানোওয়্যারে আঘাত করে তখন ন্যানোওয়্যারের রোধ কিছু সময়ের জন্য বেড়ে যায় এবং বৈদ্যুতিক পালস সৃষ্টি হয়। এই পালস একটি এমপ্লিফায়ারের মাধ্যমে ধরা পড়ে যা ফোটন কণার উপস্থিতি নির্দেশ করে। প্রযুক্তিটি প্রায় দুই দশক আগে মস্কো ইউনিভার্সিটির গবেষকরা উদ্ভাবন করেছিলেন।

এই ক্যামেরা অত্যন্ত দুর্বল আলোক সংকেত ধরতে সক্ষম। মহাকাশের দূরবর্তী কোনো বস্তু থেকে আসা আলোক কণা কিংবা মানব মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে নিঃসৃত সংকেত—সবই ধারণ করা সম্ভব এই ক্যামেরার সাহায্যে। সুপার কন্ডাক্টিং ন্যানোওয়্যার ক্যামেরা আরও উন্নত করা হলে গবেষণা আরও নিখুঁতভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেকনোলজি (NIST), ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি মিলে SNSPD প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছে। ফলে এখন ফোটনের ছবি আগের চেয়ে আরও বেশি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির এই ক্যামেরাটি ৪০০ গুণ বেশি কার্যক্ষম এবং এটি ৫ ন্যানোমিটার পুরু এবং ১০০ ন্যানোমিটার চওড়া ন্যানোওয়্যার দিয়ে তৈরি।

গবেষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি পিক্সেল থেকে আলাদাভাবে ডেটা সংগ্রহ করার পরিবর্তে পুরো পিক্সেলের কলাম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন। ফোটন আঘাত করলে প্রতিটি পিক্সেলের নির্দিষ্ট অংশ উত্তপ্ত হয় এবং সেই জায়গায় ভোল্টেজের পালস তৈরি হয় যা রিডারে ধরা পড়ে। এই প্রযুক্তি এক সেকেন্ডের ৫০ ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যে সংকেত ধারণ করতে সক্ষম। ফলে প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ফোটন কণার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

NIST এর গবেষক বাখরম ওরিপভ SNSPD প্রযুক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছেন এবং তার মতে, এই প্রযুক্তি দিয়ে একাধিক মিলিয়ন পিক্সেল ফোটন কণা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষ্য মেগাপিক্সেলে ফোটন কণার ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

গবেষণা দলটির পরবর্তী লক্ষ্য হলো প্রোটোটাইপ ক্যামেরার ক্ষমতা আরও বাড়ানো। এর ফলে সৌরজগতের গ্রহ, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আলোক পরিমাণ নির্ধারণ, মানব টিস্যুর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ—সব কিছুই আরও নিখুঁতভাবে করা যাবে। বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ এই প্রযুক্তির হাত ধরে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

Tags

- Advertisement -