বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী বছরের মধ্যে পুনরুদ্ধারের পথে : ফ্রেডেরিক নিউম্যান

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) লিমিটেড আয়োজিত “নেভিগেটিং বাংলাদেশেস ক্রসরোডস” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং সামনে থাকা সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ।

ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন এইচএসবিসির চিফ এশিয়া ইকোনমিস্ট এবং গ্লোবাল রিসার্চ এশিয়ার সহ-প্রধান ফ্রেডেরিক নিউম্যান। তার বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চালচিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন, যা এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের সর্বশেষ প্রতিবেদন “রিগেইনিং ব্যালেন্স – বাংলাদেশ লুকস টু রিকভারি” এর ভিত্তিতে প্রণীত।

নিউম্যান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে এবং এটি আগামী বছরের মধ্যে আরও শক্তিশালী হবে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশে সংশোধিত হলেও, পরবর্তী বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭.১ শতাংশে উন্নীত হবে। এ প্রবৃদ্ধি মূলত রফতানি ও রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল হবে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প, যা বাংলাদেশের রফতানির ৮৩ শতাংশেরও বেশি অংশ ধারণ করে, তা বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে আরও প্রসারিত হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক জ্বালানি দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ধীরগতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, যার পেছনে অভ্যন্তরীণ চাহিদার পুনর্জাগরণ এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রয়েছে। একই সঙ্গে, বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের পারিবারিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহায়তা করবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ত্বরান্বিত করবে।

তবে ফ্রেডেরিক নিউম্যান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে গৃহস্থালি ব্যয় এবং ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে কিছুটা ধীর করে দিতে পারে। তাই তিনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যাংকিং সেক্টরে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেন, যা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক।

ওয়েবিনারে নিউম্যান আরও বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গৃহীত আর্থিক নীতিমালা এবং দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি বাংলাদেশের জন্য একটি স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের পথ তৈরি করেছে। তবে এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে।

এই ভার্চুয়াল ইভেন্টে প্রায় ৩০০ জন গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডার অংশ নেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুব উর রহমান এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের হোলসেল ব্যাংকিং প্রধান জেরার্ড হাউহে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে এই ওয়েবিনার আশাবাদী পূর্বাভাস দিলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কথাও সামনে আসে। মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাংকিং সেক্টরে কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সফলতার চাবিকাঠি।

Tags

- Advertisement -