বাংলাদেশে ব্যাংক নোট থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর পরিকল্পনা : বাস্তবতা নাকি গুঞ্জন?

বাংলাদেশে ব্যাংক নোটের নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন ডিজাইনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দেওয়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরেও নানা জল্পনা তৈরি করেছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থবিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের উপসচিব এলিশ শরমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন নোটের জন্য নির্দিষ্ট নকশার প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। এই চিঠির মাধ্যমে নতুন মুদ্রার নকশা প্রস্তুতকারী কমিটির সুপারিশ চেয়ে পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন নকশায় শেখ মুজিবের ছবি রাখা না-ও হতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ২ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত সব ধরনের ব্যাংক নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে, যা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। নোটের দুই পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি থাকার ফলে এই ছবি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তবে নতুন ডিজাইনের নোটে এই প্রতিকৃতি বাদ পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর, নতুন নোটের নকশা জমা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ছয় মাস সময় চেয়েছে। ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিটি নোটের জন্য চারটি আলাদা নকশা তৈরি করা হবে। এরপর মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটি এই নকশাগুলো পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। যদিও এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, গত হাসিনা সরকারের সময়ে ৫০০ ও ১০০০ টাকার ব্যাংক নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি আরও স্পষ্টভাবে ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর, নোটের ডিজাইনে এই পরিবর্তন আসা নিশ্চিত নয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও নোটের নকশা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নতুন নোটের অনুমোদন ও প্রস্তুতির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে, অথবা সরাসরি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড নতুন নোটের ছাপার তদারকি করবে। নতুন নোট চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত বর্তমান নোটগুলো বাজারে প্রচলিত থাকবে।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশি মুদ্রায় একটি ঐতিহাসিক দিক হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে প্রথম মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি যুক্ত করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার পরিবর্তনের ফলে নোটের নকশায়ও পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে নতুন করে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিযুক্ত নোট চালু করে, যা ২০০৯ সালে আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমান সরকারও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি যুক্ত নোটের প্রচলন অব্যাহত রেখেছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, শেখ মুজিবের ছবি সম্বলিত নোট সরিয়ে ফেলা হবে কি না? যদিও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি কিছু বলেনি, তবে সংশ্লিষ্ট মহলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তন গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি না থাকা নোটের পরিকল্পনা শুধু একটি নকশার পরিবর্তন নয়, এটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক এবং জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে কেন্দ্র করে একটি বিতর্কের সূচনা করতে পারে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে কি থাকবে না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ মুহূর্তে এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।

Tags

- Advertisement -