বিচারক, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন

বিচার বিভাগকে আরও স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর করতে একটি নতুন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই কমিশন গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। প্রজ্ঞাপনটি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন বিচারপতি এমদাদুল হক (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ), সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার), মাজদার হোসেন (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং আলোচিত মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদি), তানিম হোসেন শাওন (সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট), কাজী মাহফুজুল হক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর) এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের মতামত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করবে। সেই প্রতিবেদন ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।

কমিশনটির কাজ হবে বিচার বিভাগের কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কারের জন্য সুপারিশমালা তৈরি করা, যা বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। কমিশনের কার্যালয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে, এবং কমিশনের সদস্যরা নির্ধারিত পদমর্যাদা, বেতন, সম্মানি ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। তবে, যদি কমিশনের প্রধান বা কোনো সদস্য বিনা বেতনে দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে তা প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করতে পারবেন।

কমিশনের কাজে সহায়তার জন্য প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর এবং সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সদস্য নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।

এই কমিশনের গঠন বিচার বিভাগের সংস্কারে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিচার বিভাগকে আরও স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কমিশনের সুপারিশগুলো বিচার বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের কার্যকারিতা ও জনগণের প্রতি এর দায়িত্ববোধ আরও সুদৃঢ় হবে। বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য গঠিত কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, যা ভবিষ্যতে দেশে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক হবে।

Tags

- Advertisement -