বিচার বিভাগের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাই কোর্টে ২৩ অতিরিক্ত বিচারপতির নিয়োগ

বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগে ২৩ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা শপথ গ্রহণের পর বিচার কার্যক্রম শুরু করবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশে মঙ্গলবার এই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এটি দেশের বিচার বিভাগে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন অতিরিক্ত বিচারপতিরা হলেন মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মো. মনসুর আলম, সৈয়দ জাহেদ মনসুর, কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, মো. যাবিদ হোসেন, মুবিনা আসাফ, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মো. আবদুল মান্নান, তামান্না রহমান, মো. শফিউল আলম মাহমুদ, মো. হামিদুর রহমান, নাসরিন আক্তার, সাথিকা হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, মো. তৌফিক ইনাম, ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, শেখ তাহসিন আলী, ফয়েজ আহমেদ, মো. সগীর হোসেন, শিকদার মাহমুদুর রাজী, এবং দেবাশীষ রায় চৌধুরী।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে তারা অনধিক দুই বছরের জন্য এই দায়িত্ব পালন করবেন। রীতি অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিদের শপথ পড়াবেন।

এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারপতিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০১ জনে। এর আগে, হাই কোর্ট বিভাগে ৭৮ জন বিচারক কর্মরত ছিলেন, আর আপিল বিভাগে ছিলেন প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমিতে এই বিচার বিভাগীয় পরিবর্তনগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর তিন দিনের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই সময়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের চাপে ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাই কোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরের দিন ছিল বিচার বিভাগের জন্য আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি, যারা ছাত্র আন্দোলনের কারণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা দুপুরের মধ্যেই পদত্যাগ করেন।

এই ঘটনার ফলে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে এবং এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নতুন ২৩ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

এটি শুধু বিচার বিভাগের সংস্কার নয়, বরং দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন বিচারপতিরা বিচার বিভাগের কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা এবং সুবিচারের প্রত্যাশা এনে দিতে পারবেন বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

Tags

- Advertisement -