ব্যাংক খাতে সংকট: বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তুলনায় মূলধন যথেষ্টতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তুলনায় মূলধন সংরক্ষণের হার কমে যাওয়ায় দেশের ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কা, যা একসময় অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের সম্মুখীন হয়েছিল, এখন ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতের মূলধন যথেষ্টতা ২০২২ সালে ১১.৮৩ শতাংশে দাঁড়ালেও ২০২৩ সালে তা কমে ১১.৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২১ সালে ব্যাংক খাতে মূলধন যথেষ্টতা ছিল ১১.০৮ শতাংশ।

তুলনামূলকভাবে ভারতের ব্যাংক খাতে মূলধন যথেষ্টতা ২০২২ সালে ছিল ১৬ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১৬.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, শ্রীলঙ্কার ব্যাংকগুলোর মূলধন যথেষ্টতা ১৫.৩ শতাংশ থেকে ১৬.৯ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের ব্যাংক খাতে মূলধন যথেষ্টতা ২০২২ সালে ১৬.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের এই দুর্বলতা ক্ষমতাচ্যুত পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামলের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অনিয়মের ফল। কিছু সুবিধাভোগী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বিদেশে পাচার করেছেন। এভাবে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলোর আয় নিম্নগতি প্রত্যক্ষ হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ মূলধন বাড়েনি।

এখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই চ্যালেঞ্জিং। দেশের জিডিপি বৃদ্ধির জন্য এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায়, এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং দেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংক খাতের মূলধন যথেষ্টতা বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ব্যাংক খাতের তুলনায় বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থান উদ্বেগজনক, এবং এর প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়তে পারে।

Tags

- Advertisement -