ব্রিকসের সম্প্রসারণে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা

বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম রাইজেনকভ এক আলোচনায় জানিয়েছেন, এই মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার কাজান শহরে আয়োজিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসে নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। রাইজেনকভের মতে, বেলারুশসহ অন্তত ১০টি দেশ এই সম্প্রসারণের প্রথম ধাপে ব্রিকসের অংশ হতে পারে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইন আলোচনায়, নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে ম্যাক্সিম রাইজেনকভ স্পষ্ট করেন যে, সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার তৈরি করা তালিকার দেশগুলোই প্রথমে সদস্যপদ পেতে পারে। তার মতে, এই উদ্যোগ বিশ্ব অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নির্দেশ করছে।

রাশিয়া বর্তমানে ব্রিকসের চেয়ার রাষ্ট্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে, এবং এ বছর ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর কাজান শহরে ব্রিকসের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনকে ঘিরে সম্প্রসারণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রত্যাশিত। বিশেষত, বেলারুশের ফার্স্ট ডেপুটি-ফরেন মিনিস্টার সের্গেই লুকাশেভিচ ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, ব্রিকসে যোগদানের জন্য তার দেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। এর পাশাপাশি, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বাহরাইন, বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, কিউবা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন, সেনেগাল এবং থাইল্যান্ডও সদস্যপদের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই সম্প্রসারণের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে তুরস্ক, জিম্বাবুয়ে এবং বুরকিনা ফাসোর মতো দেশগুলো, যারা বিভিন্ন সময়ে ব্রিকসে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে রাশিয়া, চীন, ভারত এবং ব্রাজিল মিলে ব্রিকসের সূচনা করে, পরে ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এই জোটে যোগ দেয়। সম্প্রতি, ইরান, মিসর, ইথিওপিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সদস্য হিসেবে স্বাগত পেয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ব্রিকসে যোগদানে এখন পর্যন্ত ৩৪টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পুতিনের মতে, ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছে। এই প্ল্যাটফর্ম বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্রিকস দেশগুলোকে সাহায্য করবে।

ব্রিকসের সম্প্রসারণের মাধ্যমে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোট বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। জোটের দেশগুলো বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪৬ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, আর বৈশ্বিক জিডিপিতে তাদের অবদান ৩৬ শতাংশের বেশি। ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পিপিপি) ভিত্তিতে এ দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৈশ্বিক জিডিপির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদস্যপদের জন্য আবেদন এবং ব্রিকসের সম্প্রসারণের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে শক্তিশালী একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে।

Tags

- Advertisement -