মহাকাশে পৃথিবীর প্রতিরক্ষার নতুন অধ্যায় হেরা মিশন

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) মহাকাশে একটি নতুন মিশনের সূচনা করেছে, যা পৃথিবীর নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিতে পারে। সোমবার সকাল ১০:৫৩ (১৪৫৩ জিএমটি) ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের একটি ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে হেরা নামের একটি প্রোব মহাকাশে পাঠানো হয়। এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো নাসার DART (ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট) মিশনের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ডিমর্ফোস অ্যাস্টেরয়েডের ওপর পোস্ট-ইমপ্যাক্ট সমীক্ষা পরিচালনা করা।

২০২২ সালে ডিমর্ফোস অ্যাস্টেরয়েডের ওপর নাসার DART মিশনের প্রভাব মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নতুন চিন্তাভাবনার জন্ম দিয়েছে। ডিমর্ফোস, যা ডিডিমোস নামে আরও একটি বড় অ্যাস্টেরয়েডের উপগ্রহ বা মুনলেট, তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করছে না। তবে, মহাকাশ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় রাখা হয়েছে এদের পৃথিবীর সান্নিধ্য। ডিডিমোসকে “নিয়ার-আর্থ অ্যাস্টেরয়েড” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করছে।

২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর DART মিশন সফলভাবে ডিমর্ফোসের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে প্রমাণ করে যে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে ধাবিত কোনো ছোট আকারের অ্যাস্টেরয়েডকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। সংঘর্ষটি সংঘটিত হয় প্রায় ১৪,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা (২২,৫৩০ কিমি/ঘণ্টা) গতিতে, যা ডিমর্ফোসের গতিপথ এবং আকার উভয়ই পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনা পৃথিবী থেকে প্রায় ৬.৮ মিলিয়ন মাইল (১১ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরত্বে সংঘটিত হয়। এর ফলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, মহাকাশে সংঘর্ষের মাধ্যমে আকাশের বস্তুগুলোকে সরানো বাস্তবসম্মত।

ইউরোপের হেরা মিশনটি DART-এর সাফল্যের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শুরু করা হয়েছে। জার্মানির OHB SE দ্বারা নির্মিত হেরা প্রোবটি ডিমর্ফোসের কক্ষপথ এবং গঠন নিয়ে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণ চালাবে। এই মিশনের মাধ্যমে মহাকাশে সংঘর্ষ কৌশলগুলোকে আরও কার্যকরী ও পরিমার্জিত করার চেষ্টা চলছে, যা পৃথিবীর প্রতিরক্ষায় আরও সহায়ক হবে। নাসার DART মিশনের পরীক্ষামূলক পদক্ষেপগুলিকে আরও ধারাবাহিক ও পুনরাবৃত্ত পদ্ধতিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ইএসএ এই হেরা মিশন হাতে নিয়েছে।

ফ্লোরিডার উৎক্ষেপণ কার্যক্রমটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যেখানে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের সফল উৎক্ষেপণ নজর কাড়ে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় স্পেসএক্সকে এই মিশনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।

এই মিশনের প্রভাব কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি পৃথিবীকে মহাকাশের সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষার একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে বিবেচিত হবে। DART মিশনের মতোই, হেরা মিশন পৃথিবীর প্রতিরক্ষায় মহাকাশের বস্তুর গতিপথ পরিবর্তনের প্রযুক্তি আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করবে।

মহাকাশ গবেষণায় যদি হেরা মিশন সফল হয়, তবে এটি প্রমাণ করবে যে মহাকাশের ছোট বস্তুর গতিপথ পরিবর্তন করে পৃথিবীকে বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। মহাকাশের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

Tags

- Advertisement -