যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে কর্মসংস্থানের রেকর্ড বৃদ্ধি, বেকারত্ব কমেছে ৪.১ শতাংশে

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমলেও বেকারত্বের হার ছিল এক আশঙ্কার বিষয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে নতুন কর্মসংস্থানের তথ্য অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে। এপি’র প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগকর্তারা ২ লাখ ৫৪ হাজার নতুন কর্মীকে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এই সংখ্যা দুর্বল শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ হ্রাস করেছে এবং অর্থনীতিকে আরো গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা যে হারে নিয়োগের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরে তা ছাড়িয়ে গেছে। আগের মাস আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৫৯ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল, যা সেপ্টেম্বরে এসে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বেকারত্বের হারও টানা দ্বিতীয় মাসের মতো কমেছে। আগস্টে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৪ দশমিক ১ শতাংশে। এই তথ্য শুক্রবার প্রকাশিত মার্কিন শ্রম বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

উচ্চ সুদের হার এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী রয়েছে। শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ও আগস্ট মাসে সম্মিলিতভাবে চাকরি বৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৭২ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৪০ হাজার নতুন নিয়োগের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক তিন মাসে গড় কর্মসংস্থানের হার ১ লাখ ৮৬ হাজার, যেখানে আগস্টে তিন মাসের গড় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার।

ব্যাংকিং সংস্থা স্যান্টান্ডারের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিফেন স্ট্যানলি বলেন, কর্মী নিয়োগের গতি পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি শক্তিশালী দেখা যাচ্ছে। যদিও এটি মহামারী পরবর্তী সময়ের পুনরুদ্ধারের মতো না হলেও বর্তমান নিয়োগ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক।

সেপ্টেম্বরের নতুন নিয়োগ কোনো নির্দিষ্ট খাতের উপর নির্ভরশীল ছিল না, বরং বিভিন্ন খাতে নিয়োগকর্তারা তাদের আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন। রেস্তোরাঁ ও বারে ৬৯ হাজার, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৪৫ হাজার, সরকারি সংস্থায় ৩১ হাজার, সামাজিক সহায়তা খাতে ২৭ হাজার এবং নির্মাণ শিল্পে ২৫ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ হয়েছে। এমনকি পেশাদার ও ব্যবসায়িক পরিষেবার খাত, যা টানা তিন মাস ধরে চাকরি হারাচ্ছিল, সেখানেও সেপ্টেম্বরে ১৭ হাজার নতুন কর্মী যুক্ত হয়েছে।

একই সময়ে, কর্মীদের গড় ঘণ্টাপ্রতি বেতন বৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল। পূর্বাভাস অনুসারে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে গড় বেতন ০.৪ শতাংশ বেড়েছে, যদিও আগের মাসের তুলনায় (০.৫ শতাংশ) এটি কিছুটা কম ছিল। তবে, সেপ্টেম্বর মাসে এক বছর আগের তুলনায় ঘণ্টাপ্রতি বেতন বৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ, যেখানে আগস্টে বার্ষিক বৃদ্ধি ছিল ৩.৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় এবং ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছানোর কারণে ফেডারেল রিজার্ভ সেপ্টেম্বরে সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্টে কমিয়ে আনে। এটি ছিল গত চার বছরের মধ্যে প্রথম সুদহার কমানোর পদক্ষেপ। ফেডারেল রিজার্ভ জানিয়েছিল, তারা অর্থনীতির চাকরির বাজারকে আরো শক্তিশালী করতে এবং ঋণের খরচ সহজ করতে চায়। ভবিষ্যতে সুদহার আরো কমানোরও ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এই সামগ্রিক পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তবে শ্রমবাজার এবং মূল্যস্ফীতির ওঠানামা অর্থনীতির জন্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

Tags

- Advertisement -