রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বক্তব্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃপুরুষের আবাসভূমি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার অন্তর্গত ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।

নোবেল বিজয়ীর তালিকায় তিনি শুধু প্রথম বাঙালি বা প্রথম ভারতীয়ই নন, তিনি প্রথম এশীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিকবিতাগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকাশ হয় ১৯১০ সালে। বছর দুয়েক পর, এই বইয়ের বেশ কিছু কবিতা এবং এর বাইরেরও অনেকগুলি কবিতার অনুবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয় ইংরেজি গ্রন্থ ‘সং অফারিং’ (Song Offerings)। এই বইয়ের জন্যই ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পান রবীন্দ্রনাথ। ওই বছর ১০ ডিসেম্বর স্টকহলমের নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি। টেলিগ্রামে লিখে পাঠানো তাঁর বার্তা সেখানে পাঠ করা হয়। তিনি লিখেছিলেন— “সুইডিশ অ্যাকাডেমির অনুভবের কাছে আমি আমার কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। তাঁরা দূরকে নিকট করেছেন এবং এক অপরিচিতকে ভ্রাতৃত্বে বরণ করে নিয়েছেন।” ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ সুইডেন যান। ২৬ মে স্টকহলমে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমিতে নোবেল সম্মানকে স্মরণ এবং গ্রহণ করে তিনি দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। সেই বক্তবের একাংশের অনুবাদ এখানে প্রকাশ করা হল— তাঁরই উত্তরসূরী বাঙালি অভিজিত্ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল প্রাপ্তির দিনে।সেই মুহূর্তে আমি একটি দল নিয়ে কাছাকাছি এক জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছি। ডাক ও তার অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক জন দৌড়তে দৌড়তে এসে আমার হাতে সেই তারবার্তাটি দিয়ে যায়।

অবশেষে আপনাদের দেশে আসতে পেরে আমি খুশি আর এই অবকাশেই আমার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আমাকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত করার জন্য আমি আমার কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে চাইছি।

মনে পড়ছে সেই বিকেলবেলার কথা, যে দিন আমি আমার ইংল্যান্ডের প্রকাশকের তরফ থেকে তারবার্তা মারফত এই পুরস্কার প্রাপ্তির খবরটা পাই। আমি তখন আমার বিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে রয়েছি। আমার মনে হয়, এই বিদ্যালয়টির বিষয়ে আপনারা জ্ঞাত রয়েছেন।

সেই মুহূর্তে আমি একটি দল নিয়ে কাছাকাছি এক জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছি। ডাক ও তার অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক জন দৌড়তে দৌড়তে এসে আমার হাতে সেই তারবার্তাটি দিয়ে যায়। আমার সঙ্গে গাড়িতে সেই সময়ে এক জন ইংরেজ পর্যটকও ছিলেন। তারবার্তাটি যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা সেই মুহূর্তে মনে হয়নি। আমি সেটিকে পকেটে পুরে রাখি। গন্তব্যে পৌঁছে সেটি পড়ব, এমনটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার অতিথি সম্ভবত বিষয়টি জানতেন এবং তিনি আমাকে অনুরোধ করেন সেটি পড়ে ফেলতে, বলেন— এতে গুরুত্বপূর্ণ কোনও বার্তা রয়েছে। আমি তাঁর অনুরোধেই খাম খুলে বার্তাটি পড়ি।

Tags

- Advertisement -