শুভ জন্মদিন সংগীতের অমর প্রতিভা হ্যাপি আখান্দ

আজ ১২ অক্টোবর, বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক কিংবদন্তির জন্মদিন। ১৯৬০ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনের আখান্দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হ্যাপি আখান্দ, কেতাবি নাম জিয়া হাসান আখান্দ। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তাঁর জীবনযাত্রা থেমে গেলেও, তিনি ‘ক্লাব টোয়েন্টি সেভেন’-এর অলিখিত সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। এই ক্লাবে ৭০ জনেরও বেশি সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী এবং কবির নাম রয়েছে, যাঁদের মধ্যে আছেন জিমি হেনড্রিক্স, কার্ট কোবেইন, ব্রায়ান জোন্স এবং জ্যানিস জপলিন। হ্যাপি আখান্দের মৃত্যুতে সংগীত জগতে এক অপুরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়, যা কখনো পূরণ হবে না।

হ্যাপি আখান্দের প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতা আজও স্মরণ করা হচ্ছে। তাঁর অন্যতম সৃষ্টিশীল কাজ ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’ গানটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে গাওয়া হয়ে আসছে। এ গানটি এখনো দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি সংগীত অনুষ্ঠানে শোনা যায়। এই ডিজিটাল যুগেও গানটির কদর কমেনি। অনেকেই জানেন না, এই অমর গানটির গায়ক ছিলেন হ্যাপি আখান্দ, যিনি ১৯৭৫ সালে প্রথম আলোচনায় আসেন। প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর মতে, হ্যাপি আখান্দের মৃত্যু বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জন্য প্রথম বড় ধাক্কা ছিল।

হ্যাপির প্রতিভা ও সৃজনশীলতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও আলোচনা চলছে। তাঁর অনুরাগীরা তাঁকে বাংলা গানের নতুন পথের দিশারি মনে করেন। তাঁর গানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘আমি আবার আসব ফিরে’, ‘চল যাই চলে দূরে বহু দূরে’ এবং ‘সবাই যখন ঘুমে’ এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

হ্যাপি আখান্দের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই লাকী আখান্দের সম্পর্ক ছিল গভীর। লাকী আখান্দের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে হ্যাপির শৈশব এবং সংগীতের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা। লাকী জানান, ১৯৭৩ সালে তিনি এবং হ্যাপি মিলে একটি ব্যান্ড গঠন করেন, যা ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চলে। হ্যাপির মৃত্যুর পর এই ব্যান্ডের নামকরণ করা হয় ‘হ্যাপি টাচ’।

হ্যাপি আখান্দের সৃষ্টিশীলতা বাংলাদেশের সংগীত জগতে স্থায়ী এক চিহ্ন রেখে গেছে। তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই সংগীতের আলো ছড়িয়ে দিতেন। লাকী আখান্দ বলেন, হ্যাপি সংগীতের জন্য নিরন্তর আবিষ্কার করতেন এবং গান ছাড়া তাঁর জীবনে আর কিছু ছিল না।

১৯৯৩ সালে বড় ভাই লাকী আখান্দের উদ্যোগে হ্যাপির একমাত্র একক অ্যালবাম ‘শেষ উপহার’ প্রকাশিত হয়, যেখানে লেখা ছিল, ‘বন্ধুরা আমার গান গেয়ো, আমাকে বাঁচিয়ে রেখো: জিয়া হাসান আখান্দ্ হ্যাপি’। হ্যাপির মৃত্যুতে বাংলাদেশে সংগীতের জগত থমকে যায়, তবে তাঁর গান আজও মানুষের হৃদয়ে বাজছে।

ফিডব্যাকের ১৯৯০ সালের অ্যালবাম ‘মেলা’-তে হ্যাপি আখান্দের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে ‘পালকি’ গানটি রচনা করা হয়। এই গানটি হ্যাপির মৃত্যুর পর সংগীত মহলে একটি নতুন আলো জ্বালিয়ে দেয়।

হ্যাপি আখান্দের মৃত্যু আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সত্যিকারের শিল্পী কখনো মারা যায় না। তিনি আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা স্মরণ করছি এই অমর শিল্পীকে, যিনি আমাদের সংগীতের আকাশে চিরকালীন তারার মতো উজ্জ্বল।

Tags

- Advertisement -