সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা

বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালের বাঘ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টিতে, যা ২০১৮ সালের শুমারির তুলনায় ১১টি বেশি। ২০১৫ সালের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি, আর ২০১৮ সালে এটি বেড়ে হয়েছিল ১১৪টি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এই তথ্য আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রকাশ করেছে।

বাঘ জরিপ ২০২৪-এর ফলাফল প্রকাশে জানানো হয়, সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব বর্তমানে প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ২.৬৪। এই জরিপ ২০২৩ সালের জানুয়ারি, এপ্রিল, নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের মার্চ মাসে পরিচালিত হয়, যেখানে সুন্দরবনের ২ হাজার ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মোট ৬৫৭টি ক্যামেরা ফাঁদ স্থাপন করা হয়। এই ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাঘের ছবি তোলা হয়। ক্যামেরা ফাঁদে তোলা ৩১ হাজার ৪৮২টি ছবির মধ্যে ৭ হাজার ২৯৭টিতে বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়, যা বাঘ সংরক্ষণে একটি বড় অগ্রগতি নির্দেশ করে। এছাড়া, এ বছরের জরিপে ২১টি বাঘ-শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

এই বাঘ জরিপে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা বাঘ সংরক্ষণে সরকারের গুরুত্ব ও প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সুন্দরবনের ৫৩.৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে বনের বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে, যা বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

বাঘ সংরক্ষণে আরও কিছু কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়ের জন্য ১২টি উঁচু কিল্লা বা ডিবি নির্মাণ এবং বাঘের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘ সংক্রান্ত অপরাধ উদ্‌ঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে নিতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “২০১৫ সালের পর থেকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য আনন্দদায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বাঘ এখনো অতিবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী, এবং বাঘের সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।”

বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা একটি বড় অবদান রাখছে। এসময় তিনি জানান, আইইউসিএন কর্তৃক বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে বাঘের সংখ্যা যেখানে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে ১০টি দেশে বাঘ রয়েছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের বনাঞ্চল থেকে বাঘ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাঘের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হবে এবং এই প্রজাতির পুনর্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Tags

- Advertisement -