সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও মিশরের মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারের অঙ্গীকার

আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলজুড়ে চলমান উত্তেজনা এবং সোমালিয়ার আল-শাবাব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও মিশরের নেতারা একত্রিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইরিত্রিয়ার রাজধানী আসমারায় অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে এই তিন দেশের রাষ্ট্রপতিরা আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং যৌথ সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন।

ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ার্কির আমন্ত্রণে আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ। সম্মেলনের পর ইরিত্রিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, তিন নেতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন এবং তারা প্রত্যেক দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া তারা আঞ্চলিক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন এবং যৌথভাবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সোমালিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষ করে আল-শাবাবের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মোকাবেলায় তারা সহযোগিতা আরও গভীর করার ওপর জোর দেন। সোমালিয়ার সেনাবাহিনী বর্তমানে আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং নেতারা দেশটির স্থল ও সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ইথিওপিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ ইথিওপিয়া ইতোমধ্যে সোমালিয়ায় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সৈন্য পাঠিয়েছে। তবে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ইতিমধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত ইথিওপিয়া সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে একটি বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করার পর থেকে। সোমালিল্যান্ড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়, যা ইথিওপিয়ার পরিকল্পনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইথিওপিয়ার এই উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায়, সোমালিয়া সম্প্রতি মিশরের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে মিশর আফ্রিকান ইউনিয়নের নতুন মিশনে আল-শাবাবের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নীল নদের ওপর ইথিওপিয়ার বিশাল জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিরোধ চলে আসছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার সম্পর্কও জটিল। টাইগ্রে বাহিনীর বিরুদ্ধে ইথিওপিয়ার সরকারকে সমর্থন দিলেও ইরিত্রিয়া টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের সাথে ইথিওপিয়ার শান্তি আলোচনায় বাদ পড়ার কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেবিয়াত গেটাচিউ জানিয়েছেন যে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ এবং তারা সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।

এই সম্মেলন সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও মিশরের মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Tags

- Advertisement -