হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে ইসরায়েলের ৮ সেনার প্রাণহানি

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননের সীমান্ত অতিক্রম করে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে সশস্ত্র হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধরত। এই সংঘর্ষে ইসরায়েলি বাহিনীর আটজন সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন সাতজন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) তাদের এ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নিহত সেনাদের মধ্যে চারজন ইসরায়েলের ইগোজ ইউনিটের সদস্য। এই ইউনিটটি বিশেষভাবে গেরিলা হামলা প্রতিহত করার জন্য গঠিত একটি কমান্ডো দল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নিহত সেনাদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন ইতান ইতঝাক ওস্তার। ২২ বছর বয়সী এই ক্যাপ্টেন ইগোজ ইউনিটের টিম কমান্ডার ছিলেন এবং লড়াইয়ের প্রথমেই তিনি প্রাণ হারান।

এদিকে লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (এনএনএ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের এইতারাউন শহরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ও ইসলামিক হেলথ অথরিটির প্যারামেডিকরা রয়েছেন। একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এনএনএ এই হামলাকে “নৃশংস হত্যাকাণ্ড” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইসলামিক হেলথ অথরিটির একটি কেন্দ্র এবং একটি ক্লিনিককে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে।

এর আগে, ভোরবেলা ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় লেবাননের দেবেল গ্রামে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনাগুলো লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার ক্রমবর্ধমান মাত্রা ও সহিংসতার ইঙ্গিত বহন করে।

মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই বৈঠকে আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং সতর্ক করে বলেছেন, “সময় ফুরিয়ে আসছে।” গুতেরেস আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী গত সপ্তাহ থেকেই লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেছে। গত শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন বলে জানা গেছে। এই আক্রমণগুলোর প্রতিক্রিয়ায় ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ সংগঠন প্রথমবারের মতো জানিয়েছে যে, লড়াই এখন তাদের মাটিতেই চলছে।

হিজবুল্লাহর মুখপাত্র মোহাম্মদ আফিফ বলেন, “রুখে দাঁড়ানোর মাত্র শুরু হলো।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দক্ষিণে সংগঠনের যোদ্ধারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।


ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আজ ভোরের দিকে দক্ষিণ লেবাননের ২০টিরও বেশি গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে, যেটি ইঙ্গিত দেয় যে অঞ্চলটিতে একটি বড় স্থল অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগের দিনও ইসরায়েলি বাহিনী একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল এবং আজ আরও কিছু এলাকায় এই সতর্কতা সম্প্রসারিত হয়েছে।

এদিকে, লেবাননের সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনী দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত ব্লু লাইন অতিক্রম করে লেবাননের প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছিল, যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ফিরে যায়।

এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক উদ্বেগজনক সংকেত। এখন সবার চোখ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর রয়েছে।

Tags

- Advertisement -