বাংলাদেশের ক্রীড়া শক্তিকে সামাজিক ব্যবসায় ব্যাবহারে ডঃ ইউনুসের দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশে খেলাধুলার গুরুত্ব প্রতিটি অঞ্চলে গভীরভাবে অনুভূত হয়। এটি শুধু বিনোদন ও শরীরচর্চার একটি মাধ্যম নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এই শক্তিকে সামাজিক ব্যবসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার ধারণা সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের মাধ্যমে। ডঃ ইউনুস খেলাধুলার শক্তিকে সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক ব্যবসার নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

ডঃ ইউনুসের সামাজিক ব্যবসার ধারণা মূলত এমন এক ব্যবসা মডেলকে নির্দেশ করে যা মূল উদ্দেশ্য হিসেবে লাভ অর্জনের পরিবর্তে সমাজের কল্যাণ সাধনকে গ্রহণ করে। ইউনুসের মতে, খেলাধুলা একটি এমন শক্তি যা সহজেই জনগণের মধ্যে সমাজসেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও একতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যকে সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য যেখানে খেলাধুলার প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ রয়েছে, এই শক্তিকে সামাজিক পরিবর্তনের একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা অপরিসীম।

খেলাধুলার মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসার সুবিধা অনেকখানি গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম। প্রথমত, খেলাধুলা তরুণ প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। বাংলাদেশের যুব সমাজ বর্তমানে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে অনুপ্রেরণা ও স্বাস্থ্যের অভাব অন্যতম। খেলাধুলা এই সমস্যার একটি অংশের সমাধান দিতে পারে, কারণ এটি শরীরচর্চা এবং মেন্টাল হেলথের উন্নতি ঘটায়। ডঃ ইউনুসের মতে, খেলাধুলার মাধ্যমে যুবকরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং এটি তাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

দ্বিতীয়ত, খেলাধুলার মাধ্যমে সামাজিক একতা এবং সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ খেলাধুলার মাঠে একত্রিত হতে পারে, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায়। এই একতা এবং সম্পর্ক সমাজের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে, যা সামাজিক ব্যবসার উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। খেলাধুলার মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই সহযোগিতার মনোভাব বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে সাহায্য করতে পারে এবং একটি অধিক সমন্বিত সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে।

তৃতীয়ত, খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার উপস্থিতি ছাত্রদের মধ্যে দলগত কাজ, নেতৃত্বের গুণাবলী এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। সামাজিক ব্যবসায় এই শিক্ষা ও দক্ষতাগুলি কাজে লাগিয়ে, যুব সমাজকে প্রোফেশনাল দক্ষতা ও উদ্যোক্তা গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করা যেতে পারে। এতে করে তারা শুধুমাত্র খেলাধুলার মাঠে নয়, বরং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফলভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।

সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও খেলাধুলার শক্তি ব্যবহারের আরেকটি দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। খেলাধুলার বিভিন্ন কার্যক্রম অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, খেলাধুলা সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন বাজার এবং সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে খেলার মাঠের বাইরেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় খেলাধুলার অনুষ্ঠান বা প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

ডঃ ইউনুসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, খেলাধুলার শক্তিকে সামাজিক ব্যবসায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও কৌশল প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে, সরকারের উচিত খেলাধুলার ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণে সুবিধা প্রদান করা, যেমন উন্নত পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা। এছাড়া, বেসরকারি সংস্থা এবং এনজিওর মাধ্যমে খেলাধুলার সামাজিক প্রকল্পসমূহ পরিচালনা করা যেতে পারে, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং সামাজিক পরিবর্তন ঘটাবে।

পরিশেষে, ডঃ ইউনুসের মতে, বাংলাদেশের খেলাধুলার শক্তিকে সামাজিক ব্যবসায় ব্যবহার করার মাধ্যমে সমাজে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব। খেলাধুলার মাধ্যমে প্রেরণা, স্বাস্থ্য, একতা এবং শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনের পথ সুগম করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং একটি দৃঢ় সামাজিক ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদনের একটি মাধ্যম নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যা ডঃ ইউনুসের মতে, বাংলাদেশের সমাজে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম।

Tags

- Advertisement -