বই কেন পড়বো?

ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর

মহৎ লোকের সাথে আলাপ করা।”

বই মানুষের জীবনে অকৃত্রিম বন্ধু। বন্ধু বন্ধুর সাথে বেইমানি করলেও বই মানুষের সাথে বেইমানি করে না। পবিত্র কোরআনে প্রথম যে আয়াতটা নাজিল হয়েছে তাই হলো: ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক” “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন”

বই মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী, বই হাসায়, কাঁদায়, তবে কখনো একা ফেলে রেখে যায় না। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস খুবই ভালো। বই আপনার চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করে। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেবে আপনার জ্ঞান। বই হচ্ছে মানুষের সেই বন্ধু যে কখনো ক্ষতি করে না। আপনার বিভিন্ন সমস্যায় বইয়ের জ্ঞান আপনাকে অনেক কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ ফেসবুক, ইমু, হায়াটসঅ্যাসহ, ভিডিও গেইমসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। প্রযুক্তিতে যেমন বাদ দেয়া যাবে না। তেমনি বই পড়ার অভ্যাসটা ত্যাগ করা যাবে না। বই আপনার অজ্ঞতার প্রাচীর ডিঙিয়ে জ্ঞানের আলোয় আপনাকে করবে আলোকিত। আত্মা করবে পরিশুদ্ধি। তাই বেশি করে বই পড়ুন।

বই পড়া আপনাকে সহানুভূতি বিকাশ করতে, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন চরিত্র এবং কাহিনীর সাথে নিজেকে উন্মুক্ত করে, আপনি মানব প্রকৃতি এবং আবেগ সম্পর্কে একটি বৃহত্তর বোঝার বিকাশ করতে পারেন। এটি আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় জীবনেই উপকারী হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে বই পড়া স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে , সম্ভবত এর জন্য একাগ্রতা এবং ফোকাস প্রয়োজন। ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্সের গবেষকরা দেখেছেন- যে অংশগ্রহণকারীরা যারা মাত্র ছয় মিনিটের জন্য পড়েন তাদের পেশীতে টান কমে যায় এবং হৃদস্পন্দন কমে যায়।

প্রথম চৌধুরির ভাষায়-

জ্ঞানের ভান্ডার যে ধনের ভান্ডার নয় সত্য তো প্রত্যক্ষ। কিন্তু সমান প্রত্যক্ষ না হলেও সমান সত্য যে, যুগে যে জাতির জ্ঞানের ভাণ্ডার শূন্য সে জাতির ধনের ভাঁড়েও ভবানী।”

আমাদের তরূণ প্রজন্মের একটা বৃহৎ অংশ আজ হতাশ, অবসাদগ্রস্থ, দিশেহারা। ফেসবুক বা অন্যকোন স্যোসাল মিডিয়ায় অন্যের অর্থহীন সমালোচনা, অশ্লীল গালিগালাজ করে করে এরা স্বস্তি খুজে পায়। আজকের দিনের সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ অবশ্যই বই না-পড়া। এই বিধ্বস্ত প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে পারে বই। আমরা যত বেশি নতুন প্রজন্মমের হাতে বই ধরিয়ে দিতে পারব ততই মঙ্গল।

বই পড়ার ফলে আপনার চোখ খুলে যাবে। আপনি সহজে মানুষ ও আশপাশের সব  বুঝতে পারবেন ও স্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে পারবেন।

বই মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়ায় । যেমন ডঃ সিউস একবার লিখেছিলেন,

আপনি যত বেশি পড়বেন, তত বেশি জিনিস আপনি জানতে পারবেন। আপনি যত বেশি শিখবেন, তত বেশি জায়গায় আপনি যাবেন।”

একটি ভাল বইয়ের মধ্যে ডুব দিলে খুব অল্প বয়স থেকেই জ্ঞানের পুরো পৃথিবী খুলে যায়।

কেন আমি বই পড়তে আগ্রহী নই ?

পড়ার মন্দা, টেলিভিশন, মানসিক অসুস্থতা বা ক্লান্তির কারণে আপনি পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। পড়ার প্রতি আপনার ভালবাসাকে পুনরুজ্জীবিত করতে, একটি বই ক্লাবে যোগ দিন, বিভ্রান্তি এড়ান, বিরতি নিন এবং আপনার পড়ার পদ্ধতি বেছে নিন। মানুষ জ্ঞান অর্জন এবং তথ্য আবিষ্কার করার জন্য পড়ে।

বই পড়লে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বই পড়ার সময় মস্তিস্কের যে অংশটি স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেই অংশটি বিশেষভাবে সক্রিয় হয়।তাই বই পড়লে মনে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ে।

রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বই পড়ার সময় এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। তাই শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে রাতে কিছুক্ষণ বই পড়ে শুলে ক্ষতি কী?

এখনকার জীবনযাত্রায় সবাই বড্ড বেশি দুশ্চিন্তা করেন। মন এবং মস্তিস্কের ক্লান্তি দূর করতে বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান। দুশ্চিন্তা কমানোর ক্ষেত্রে বই হতেই পারে অন্যতম হাতিয়ার।

কর্মক্ষেত্রে হোক কিংবা পড়াশোনায়, যেকোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে গেলে মনোযোগ সহকারে সেই কাজটি করা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বই। প্রতিদিন বই পড়লে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ফলে উন্নতি ঘটে মনঃসংযোগের ক্ষমতারও।

বই ছাড়া একটি কক্ষ আত্মা ছাড়া দেহের মত।

বই পড়লে বাড়তে পারে আয়ুও। আদৌ কি এমনটা সম্ভব হয়, ভাবছেন নিশ্চয়? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বই পড়েন এমন মানুয অন্যদের তুলনায় দীর্ঘজীবী হন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বই মানে কিন্তু কাগজে ছাপা বই-ই পড়তে হবে। মোবাইল বা ট্যাবের আলোকিত পর্দায় বই পড়লে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল রেখে ব্যবহার করা যেতে পারে ই-বুক রিডারও। কারণ তার পর্দা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় না।

বই পড়া কিভাবে শুরু করব?

সপ্তাহে কয়েকবার পড়ার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন । এমন একটি সময় বেছে নিন যেখানে আপনার কোনো ঝামেলা হবে না এবং একটি ভালো পড়ার সেশনের জন্য নিজেকে আরামদায়ক করে তুলুন। যদি আপনি দীর্ঘ উপন্যাস পড়তে না পারেন, ছোট গল্প বা কমিক বই চেষ্টা করুন. সময়ের সাথে সাথে, পড়া আরও বেশি সময় ব্যয় করা সহজ হবে।

আপনি যদি কোনও আগ্রহী পাঠককে নতুনদের জন্য পড়ার জন্য কিছু ভাল বই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন তবে তারা অবশ্যই গ্রেট গ্যাটসবি উল্লেখ করবে। ২০ শতকের ক্লাসিক সাহিত্যের মধ্যে, দ্য গ্রেট গ্যাটসবি ধনী জে গ্যাটসবি এবং ডেইজি বুকাননের প্রতি তার ভালবাসার গল্প অনুসরণ করে।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ‘নিজেকে জানা’। একজন মানুষ তখনই সফল হয় কিংবা তার জীবনের লক্ষ্য পূরন করতে সমর্থ হয় যখন সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে বুঝতে পারে। আজ থেকে প্রায় আড়াইহাজার বছর পূর্বে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, “To know thyself is the beginning of wisdom.” অর্থাৎ “নিজেকে জানাই হল জ্ঞানের শুরু।” সুতরাং একজন মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজেকে জানতে বা উপলব্দি করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে তার ভিতরে জ্ঞানের শুরুই হয় না।

নিজেকে জানার এই সুকঠিন কাজটি একেবারেই সহজ হয়ে যায় বই পড়ার মধ্য দিয়ে। যারা শুধুমাত্র শিরোনাম দেখে এই লেখাটি পড়া শুরু করেছিলেন তারা চাইলে এখানেই থেমে যেতে পারেন কেননা “বই কেন পড়ব?”—এই প্রশ্নের উত্তরে আমার বক্তব্য এটাই। হ্যা, আমি মনে করি, বই পড়লে মানুষ নিজেকে জানতে পারে। তাহলে কি নিজেকে জানার পর আর বই পড়ার প্রয়োজন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর হল, নিজেকে জানার আসলে কোন শেষ নেই। একজন মানুষের মধ্যে কি প্রতিভা লুকিয়ে আছে কিংবা সে কি করতে পারে, তা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে জানার চেষ্টা করতে পারে। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের বই পড়ে যাওয়া উচিত।

আসুন আমরা সকলে বই পড়ি এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি।

Tags

- Advertisement -