দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদীর ইতিহাস

অপারথেইড: নীতি ও বাস্তবতা

অপারথেইড (এএনপি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) ছিল একটি জাতিগত বিভাজন নীতি যা দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা জনগণের অধিকারের প্রতি আস্থা রাখে এবং বর্ণবৈষম্যের মাধ্যমে কালো জনগণের মানবাধিকার সীমিত করে। এই নীতি অনুযায়ী, কালো জনগণকে সাদা জনগণের সাথে সম্পর্কিত এবং একই এলাকায় বসবাসের অধিকার দেওয়া হয়নি। তারা আলাদা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও অন্যান্য মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল।

অপারথেইডের বাস্তবতায়, কালো নাগরিকদের সম্পত্তির অধিকার সীমিত করা হয়েছিল। বিভিন্ন দাঙ্গা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অপারথেইডের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক চাপ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল।

সংগ্রাম ও পরিবর্তন:

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে নানা আন্দোলন ও সংগ্রাম চলেছে। ১৯৫২ সালে রেভোলিউশনারি লিডার নেলসন ম্যান্ডেলা এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) নেতৃত্বে ‘সাহিত্যের পথে’ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে শার্পভিল গণহত্যা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়, যখন পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন কালো মানুষ নিহত হয়।

১৯৯০ সালে ম্যান্ডেলা মুক্তি পেলে এবং ১৯৯৪ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এএনসি বিজয়ী হলে, অপারথেইডের অবসান ঘটে। ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন।

পরিণতি ও বর্তমানে :

অপারথেইডের অবসানের পরও দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজে বৈষম্যের কিছু দিক অব্যাহত রয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বিভাজন এখনও একটি বড় সমস্যা। তবে, জাতি গঠনের প্রক্রিয়া এবং নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী ইতিহাস কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি বিশ্বের মানবাধিকার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অপারথেইডের প্রভাব এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের সংগ্রাম আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের সমতা ও মানবাধিকারের প্রতি নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সময়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন ও পরিবর্তন প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের জন্য একটি উজ্জ্বল বার্তা দেয়, যেখানে সমতা, ন্যায় এবং মানবাধিকার সম্মানিত হবে।

Tags

- Advertisement -