মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেন-জির প্রজন্ম ভালোবাসে কমলা হ্যারিসকে।

আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্বের প্রায় অনেক দেশ এই নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতিযোগিতার ময়দান থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরিয়ে নিলেন নিজেকে। পরক্ষণেই মতামত দিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বাইডেনের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও, জেন-জির প্রজন্ম অপেক্ষায় বিভোর টগবগে অল্প বয়সী কমলা হ্যারিসের প্রতি।

৮ই সেপ্টেম্বর এপির বার্তাসংস্থার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় – ‘জেনারেশন জি’ বা জেন-জি বলা হয় যাদের জন্ম ১৯৯৭ হতে ২০০১ সাল মধ্যবর্তী সময়ে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হবার সম্ভাবনা কমলা হ্যারিসের, চলছে চরম উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা জেন-জি প্রজন্মের ভোটারদের মাঝে।
কমলা হ্যারিসের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার নিয়ে ব্যস্ত জেন-জি প্রজন্মের ভোটাররা । পূর্বেও ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতৃত্বের প্রতি ভরসা করেছিলো এই প্রজন্ম।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তাল তরুণদের বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত কমলা হ্যারিস;
‘উই নিড আ কমলানোমেনোন’ (আমাদের একটি কমলাকান্ড প্রয়োজন), ‘জেন জি ফিলস দ্য কমলাভ’ (জেনজি কমলার জন্য ভালোবাসা অনুভব করে)।

চলতি কয়েক মাসব্যাপী জেন-জির প্রগতিশীল সংগঠনগুলো জানিয়ে আসছে, যে জেন-জির কাছে তিক্ততায় পরিনত হয়েছে জো বাইডেন। তাই সবার কাম্য তিনি যেনো জেন-জির কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেন। তরুণ্যের সমস্যাগুলো সমাধান করেন। পরবর্তীতে এসবে কর্ণপাত করেননি জো বাইডেন।
তরুণ্যের নারী ও পুরুষেরা মন জয়ের স্বপ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে সম্ভাবনাময় কমলা হ্যারিসের দিকে।
৬ই সেপ্টেম্বর কমলা হ্যারিসের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছে সতেরোটি জেন-জি নির্ভর সমন্বয় গঠিত একটি সংগঠন।
৮ই সেপ্টেম্বর অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা কমলা হ্যারিসের পক্ষে সভা যাত্রা করেন, অপেক্ষায় থাকা জেন-জি প্রার্থীর সভা যাত্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতারা উপভোগ করেন। পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন হতে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিশ্লেষকদের মতামতে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজ্যে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সৃষ্টি করবে জেন-জি প্রজন্মের ভোটাররা। বিধায় তরুণ ভোটারদের দিকে মনযোগী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প।
৭ই সেপ্টেম্বর আটলান্টায় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করেন জেন-জি অধিকারকর্মী ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মাঝে। কমলা হ্যারিস সেই ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আমরা জানি, তরুণদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা আরও জানি যে এ বিষয়টিকে হালকা করে নেওয়ার কোনো উপায় নেই।’
ভিডিও বার্তায় তিনি আরো বলেন -অস্ত্রের নিরাপদ ব্যবহার, গর্ভপাতের অধিকার, এলজিবিটিকিউ অধিকার, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

অন্যদিকে ট্রাম্প ফ্লোরিডায় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের বিপক্ষে বিভিন্ন বিষয় সমালোচনা করেন। টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ সম্মেলনের মূল ভাষ্য ছিল ধর্মবিশ্বাস।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে ‘অকর্মণ্য’ ও ‘কট্টর বামপন্থি’ ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে আখ্যা দেন। ২য় বারের মত হোয়াইট হাউসে গিয়ে ধর্মবিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় প্রাণপণ প্রচেষ্টা করবেন বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান -‘নাগরিকদের ভোটের মধ্যে দিয়ে আমি সর্বদিকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত প্রদান করবো। আমি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামরিক বাহিনী, সরকার, কর্মক্ষেত্র, মানবসেবা হাসপাতালে ও সর্বজনীন জায়গায় প্রকাশ্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধিকার সহ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের সুরক্ষা দেব’ ।
স্কুল, কলেজ সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খ্রিস্টধর্ম বিকাশ করে থাকে এই রক্ষণশীল জনগোষ্ঠী। তরুণদের (জেন-জি) মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে নিয়ে যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, যা পূর্বে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রার্থিতার সময় দেখা গিয়েছিলো বলে জানান- হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্স বিষয়ক ডিরেক্টর জন ডেল্লা ভলপে ।
তিনি আরো বলেন- সাম্প্রতিক সময়ে কমলা বা ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তরুণদের নিয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ চালানো হয়নি জানিয়ে বলেন, ‘তবুও, যা দেখতে পাচ্ছি, তা পূর্বে বারাক ওবামাকে ঘিরে সর্বশেষ আশাবাদ দেখা গিয়েছিলো।

কমলা হ্যারিসের আবির্ভাবে বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে বলে ভাবছেন জেন-জি ভোটাররা।
‘দীর্ঘদিন ধরে তারা রাজনীতি ও দেশ কোনদিক হতে কোনদিক যাচ্ছে; এগুলো নিয়ে তারা নিস্পৃহতার মধ্যে দিনপার করেছে। হঠাৎ একদিন রাত্রে যাপনের পর ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলেন, সব কিছু বদলে গেছে।’
নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা ও সিএনএনের পরিচালিত জরিপে বাইডেন সরে যাবার পর দেখা গিয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্টের থেকে কমলা হ্যারিসের সম্পর্কে কিছুটা বেশি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে জেন-জি তরুণ-তরুণীরা।
‘বাইডেনের সরে যাওয়া ও কমলা হ্যারিসের আবির্ভাবে আমার বুক থেকে একটি বড় বোঝা সরে গেছে বলে জানান; যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ডেমোক্রেটিদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় মুরালিধন।’ আরও বলেন- শিক্ষার্থীরা বামপন্থীদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। তাই চলতি কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিস্পৃহতা কাটানোর জন্য বাইডেন সম্পর্কে প্রচার করলেও তা পূর্বের ন্যায় থাকে। সাম্প্রতিক কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতার সংবাদ প্রচারের পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
জেন-জি ভোটারদের সংগঠন ভোটার্স অব টুমরোর নির্বাহী ডিরেক্টর সান্তিয়াগো মেয়ার বলেন; ‘আমরা কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। কারন জেন-জি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ভালোবাসেন, অন্যদিকে কমলা হ্যারিসও জেন-জিকে ভালোবাসেন’।

Tags

- Advertisement -