স্ক্র্যাপ জাহাজের শুল্ক নীতিতে দ্বৈত কর ও আর্থিক ক্ষতির চিত্র

আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের ওজন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত ‘লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ’ (এলডিটি) শব্দটি শিপইয়ার্ড মালিকদের কাছে পরিচিত একটি পরিভাষা। এই এলডিটির ভিত্তিতে প্রতি টনে ১৫০০ টাকা করে আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, জাহাজের জেনারেটর এবং অন্যান্য ফিটিংসের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। এর অর্থ হলো, একে ‘দ্বৈত কর’ বা একই জিনিসের জন্য দুইবার শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারকদের আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলছে।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পর পুরো জাহাজের ওজনের মধ্যে জেনারেটর, বিভিন্ন ফিটিংস এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এভাবে এলডিটির ভিত্তিতে প্রাথমিক শুল্ক আদায় করা হয়। কিন্তু পরে, একবারের শুল্ক পরিশোধের পরেও, জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। ফলে একই জিনিসের জন্য দুইবার শুল্ক পরিশোধের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

এছাড়া, জাহাজ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, ডিজেল অয়েল ইত্যাদির উপর শুল্ক আদায়ের নিয়মেও পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮ সালে সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) জারি করে এসব তেলের শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৫-৬ বছর ধরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেই বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা অনুসরণ না করে ব্যবহৃত লুব অয়েলের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৪০% অবচয় সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। বর্তমানে ব্যবহৃত লুব অয়েল এবং নতুন লুব অয়েলের জন্য টনপ্রতি ২ হাজার ডলার ট্যারিফ মূল্য ধার্য করে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। এর ফলে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি টনের জন্য প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা শুল্ক আদায় হচ্ছে, যা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারকদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড মালিকরা মন্তব্য করেছেন, ১৫ থেকে  ২০ বছর পুরোনো একটি জাহাজ সাধারণভাবে স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি হয়। তেমনি, এসব জাহাজের এসি, জেনারেটর, ক্যাবল ইত্যাদি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ধরনের পণ্যের পুনঃবিক্রয় মূল্য অত্যন্ত নগণ্য হওয়ায় এগুলোর জন্য ৮০%-৯০% অবচয় সুবিধা প্রদান করা উচিত। স্ক্র্যাপ জাহাজের জেনারেটর, এসি, ক্যাবল ইত্যাদি ফিটিংসের জন্য এলডিটির ভিত্তিতে একবার শুল্ক পরিশোধের পর আবার দ্বিতীয়বার শুল্ক আদায়ের এই অযৌক্তিক নিয়ম বাতিল করা উচিত। এছাড়া, জাহাজে ব্যবহৃত ‘লুব অয়েল ইন ট্যাঙ্ক’-এর পুনঃবিক্রয় মূল্যও খুবই কম, এমনকি শুল্ক পরিশোধের পর প্রাপ্ত অর্থও কষ্টকর হয়। ফলে, আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে কাস্টমসের সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) অনুযায়ী ৪০% অবচয় সুবিধা পুনঃপ্রবর্তন করা উচিত বলে মনে করা হয়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশের ইস্পাত কারখানাগুলোর কাঁচামালের প্রধান উৎস হচ্ছে স্ক্র্যাপ জাহাজ। কয়েক বছর আগে যেখানে বার্ষিক ৩৫-৪০ লাখ টন স্ক্র্যাপের যোগান ছিল, বর্তমানে তা কমে ১৫-১৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, স্ক্র্যাপ জাহাজের জেনারেটরসহ অন্যান্য ফিটিংসের জন্য অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা পর্যালোচনার দাবি উঠেছে।

Tags

- Advertisement -