২০৪০ সালের মধ্যে এলএনজির চাহিদা বর্তমান থেকে দ্বিগুণ হতে পারে

এলএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস যাকে সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে তরলে রূপান্তর করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে এলএনজির জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। এলএনজি আলাদা কোন জ্বালানি নয়, আদতে এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলকরণ (refrigeration) প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে -১৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই এলএনজি বলা হয়।

গ্লোবাল এনার্জি ট্রেডার গানভরের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান টরবিয়র্ন টর্নকুইস্ট সম্প্রতি জানান, দাম না বাড়লে ২০৪০ সালের মধ্যে এলএনজির চাহিদা বর্তমান পর্যায় থেকে আরো ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের এশিয়া প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম কনফারেন্সে (এপিপিইসি) তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিজনেস রেকর্ডার এর তথ্য মতে, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় চলতি সপ্তাহে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা ছিল তুলনামুলক নিম্নমুখী। অন্যদিকে এ সময় জাপানে তাপমাত্রা বেশি থাকায় প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির মজুদ কমে গিয়েছিল। ফলে এশিয়ার স্পট মার্কেটে চলতি সপ্তাহে স্থিতিশীল ছিল এলএনজির দাম।

শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরে সরবরাহের জন্য চলতি সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য ছিল ১৩ ডলার ১০ সেন্ট। এশিয়ার স্পট মার্কেটে গত সপ্তাহেও প্রায় একই দামে এলএনজি বেচাকেনা হয়েছিল।

এফজিইর গ্যাস অ্যান্ড এলএনজি সাপ্লাই অ্যানালিটিকসের পরিচালক সিয়ামক আদিবি বলেন, ‘‌চীনে এলএনজির পর্যাপ্ত মজুদ এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে স্পট মার্কেটের কার্যক্রম সীমিত ছিল। ফলে চলতি সপ্তাহে স্থিতিশীল ছিল এলএনজির দাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌ইউরোপের দেশগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট সক্ষমতার প্রায় ৯৩ শতাংশ পূর্ণ। তাই এ অঞ্চলে আপাতত এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হবে না।’

জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশ। দেশটির প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজির মজুদ ছিল প্রায় ১৮ লাখ ৭০ হাজার টন। ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা কমে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪০ হাজার টন।

আদিবি বলেন, ‘‌জাপানে এলএনজির মজুদ তুলনামূলক কমেছে। সামনের শীতের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেশটি আগেই পণ্যটির আমদানি বাড়াতে পারে।’

রাবোব্যাঙ্ক লন্ডনের এনার্জি স্ট্র্যাটেজিস্ট ফ্লোরেন্স স্মিত বলেন, ‘‌এলএনজি সরবরাহ পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে। তবে সামনের শীতে তাপমাত্রা যদি আগের তিন বছরের তুলনায় কমে যায়, তাহলে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এলএনজির কার্গো নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে।’

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস গত বৃহস্পতিবার নভেম্বরের সরবরাহ চুক্তিতে নর্থওয়েস্ট ইউরোপ এলএনজি মার্কার (এনডব্লিউএম) বাজার আদর্শে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম স্থির করেছে ১২ ডলার ৩৭৫ সেন্টে। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভার্চুয়াল ট্রেডিং পয়েন্ট টিটিএফে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজিতে দশমিক ২১৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে।

আরগাস নভেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২ ডলার ৪০ সেন্ট। অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিজ অক্টোবরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম নির্ধারণ করেছে ১২ ডলার ২২৫ সেন্ট।

স্পার্ক কমোডিটিজের বিশ্লেষক কাসিম আফগান জানিয়েছেন, গত শুক্রবার আটলান্টিক সাগরপথে এলএনজি পরিবহনের ব্যয় কমে দৈনিক ৫৭ হাজার ৭৫০ ডলারে নেমেছে। অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে পরিবহন ব্যয় নেমে এসেছে দৈনিক ৬৪ হাজার ডলারে।

Tags

- Advertisement -