১৫ বছরের দুঃখ-দুর্দশা ১৫ দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়: ড. ইউনূস

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনগণ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না, বরং পরিবর্তনের জন্য উদগ্রীব। তিনি জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ বলছেন দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। আবার কেউ মনে করছেন সংস্কার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর নির্বাচন হতে হবে।

এদিকে, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচন আয়োজন নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সেটি মোটেই অযৌক্তিক নয়।” সামরিক নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি মন্তব্য করেন, কিছু লোক মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকতে হবে যাতে সকল সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তিনি উল্লেখ করেন, “তারুণ্যের স্বপ্নের বাংলাদেশ ২.০-তে প্রবেশ করতে হলে পুরনো অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “এই জাতি আজ পর্যন্ত এমন একটি সুযোগ পেয়েছে, যেখানে সব মানুষ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে পরিবর্তনের জন্য।” তিনি জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “এত প্রাণ দেওয়ার পরে যদি আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাই, তাহলে তার কোনো অর্থই হবে না।”

বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “বিপ্লবের আবহে অনেক মানুষ মারা গেছে। যাঁরা এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কিছু লোক শেখ হাসিনার দলের সমর্থক।” তিনি এ ব্যাপারে উল্লেখ করেন যে, এই হামলাগুলি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথক করা সম্ভব নয় এবং সরকার দায়িত্ব নিলে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

প্রতিশোধপরায়ণতার পরিবেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময় ড. ইউনূস বলেন, “প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। বিক্ষোভের অধিকাংশই মূলত মজুরি বৃদ্ধির দাবি এবং চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য।” তিনি জনগণকে আশ্বস্ত করেন যে, তাঁদের ১৫ বছরের দুঃখ-দুর্দশা ১৫ দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।” তিনি দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে একটি নতুন শুরুর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

সার্বিকভাবে, ড. ইউনূসের মন্তব্যগুলো রাজনৈতিক সংকটের মোকাবেলা এবং জনগণের চাহিদার প্রতিফলন হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যেখানে পরিবর্তনের আশায় জাতি নতুন একটি দিগন্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

Tags

- Advertisement -