সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব: লুটপাটের নেপথ্যে কী?

সম্প্রতি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার ঘটনা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনায় গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাংকের শাখাগুলোতে আমানতকারীদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

রোববার কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে এ এফ হাসান আরিফ এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান। তিনি বলেন, “ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি ব্যাংকের সম্পত্তির অবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই বিশাল অনিয়মের খোঁজ পাই।”

এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকের সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা একসময় ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন, তারাই এখন এই বেদখলের সঙ্গে জড়িত। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাংকটি ভেঙে পড়েছে এবং এখন এটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।”

ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে সমবায় ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকের লকার থেকে খোয়া যাওয়া ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের মালিকানাধীন ছিল। এই ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা স্বর্ণ বন্ধক রেখে প্রায় ১২ কোটি টাকা লোন নিয়েছিল।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, সোসাইটির সদস্যরা লোন শোধ করলে তাদের জমা রাখা স্বর্ণ তুলে নিতে পারবে। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভুয়া ব্যক্তিকে সোসাইটির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রশিদের মাধ্যমে লোন পরিশোধ করে সোনা তুলে নেয়।

ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি জানান, সোনার বাজারমূল্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় এই চক্রটি লোন শোধ করেই তাদের বন্ধক রাখা সোনা তুলে নেয়। তাদের এই জালিয়াতির চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে প্রায় ৮ হাজার ভরি স্বর্ণ তুলে নেওয়ার পর বিষয়টি ফাঁস হয়।

তিনি আরও বলেন, “মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটে সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। চার্জশিটে থাকা বেশিরভাগ ব্যক্তিই বর্তমানে জামিনে আছেন, তবে মামলাটি এখনো বিচারাধীন।”

এই অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, সমবায় ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এই ঘটনার পর ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার মতিঝিলের প্রধান শাখায় আমানতকারীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তারা দ্রুত তাদের টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা যদিও গ্রাহকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, তবুও গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগের কোনো শেষ নেই।

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনা গায়েবের ঘটনা দেশে ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতির আরেকটি অধ্যায়কে উন্মোচিত করেছে। এমন একটি ঘটনা ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অপেক্ষা আইনি প্রক্রিয়ার ফলাফল এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি।

Tags

- Advertisement -