ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধের পরিকল্পনা

লেখক: অ্যারন বক্সারম্যান (নিউইয়র্ক টাইমস)

মধ্যপ্রাচ্যে আবার উত্তেজনার আগুন জ্বলে উঠেছে। ইরানের সাম্প্রতিক মিসাইল আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল তাদের পাল্টা প্রতিশোধের কৌশল শুরু করেছে, যা দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েল ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দিয়েছে, যার ফলে তেহরানের ইসরায়েল আক্রমণের ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে।

গত এপ্রিলে ইসরায়েল কিছুটা প্রতীকী পাল্টা আক্রমণ করেছিল, তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইরানের হামলার জবাব আরও কঠোরভাবে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েল, যা এপ্রিলের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাপক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিলের আক্রমণে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় অনেকটাই সতর্ক ছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইসরায়েল লেবাননে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে, যাতে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিহত হয়েছেন। লেবাননে স্থল আক্রমণ শুরু করার ফলে সাময়িকভাবে হলেও হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়েছে, যার কারণে ইরান এখন অনেকটাই একা লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে।

ইরান বিশেষজ্ঞ দয়ানি সিট্রিনোইজ বলেন, “এখন ইসরায়েল অনেক বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, কারণ হিজবুল্লাহ আর পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধে জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে না।” ফলে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ আরও তীব্র হতে পারে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর দিকে ইসরায়েল নজর দিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, যা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কিছুটা কমিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেবে, কারণ সামনে আমেরিকার নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনের কারণে ওয়াশিংটন চাইতে পারে যে ইসরায়েল এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আমেরিকান জনমত প্রভাবিত হতে পারে। ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া তাই কিছুটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপরও নির্ভর করবে।

তবে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছুড়েছে, যা এই সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়েছে। ইসরায়েলের জাতীয় প্রতিরক্ষা পরামর্শক মেজর জেনারেল ইয়াকভ আমিদর বলেন, “আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা ইরানকে কতটা ক্ষতি করতে পারব, আর তারা আমাদের কতটা ক্ষতি করতে পারবে।” ইসরায়েলের মূল চ্যালেঞ্জ এখন শুধু ইরানের আক্রমণের জবাব দেওয়া নয়, বরং কীভাবে আরও শক্তভাবে ইরানকে মোকাবিলা করা যায়, সেটাই মূল ভাবনা।

সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এই সংঘাতকে গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ধ্বংস করার এখনই সঠিক সময়। তাদের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করা উচিত, এবং তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মাথায় আঘাত করা উচিত।” বেনেটের এই মন্তব্য ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধ পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দেয়।

এটি স্পষ্ট যে, ইসরায়েল এবং ইরান উভয়েই নিজেদের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসতে প্রস্তুত নয়। সংঘাত আরও বাড়তে পারে এবং এর শেষ কোথায় তা বলা মুশকিল। ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ ইরানকে নতুন করে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করতে পারে, এবং এই উত্তেজনা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে।

ইসরায়েলের বর্তমান কৌশল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। হিজবুল্লাহকে আঘাত করে ইরানের প্রতিক্রিয়া দুর্বল করার পরিকল্পনাও এরই অংশ। তবে সংঘাতের এই ধারাবাহিকতা কতদিন চলবে এবং কতটা ভয়াবহ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Tags

- Advertisement -