বিশ্ব চা উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান

চা বিশ্বের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। চা কেবলমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের জন্যও বিখ্যাত। অনেকের দিনে একবার চায়ের দোকানে বসে চা না খেলে গোটা দিনটাই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।অনেকসময় দেশে দেশে বন্ধুত্ব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় এ চা।যেমন, ১৯৭৩ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আরবদের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিশরে চা পাঠিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস। তবে এ চায়ের স্বাস্থ্যগুণ ও রয়েছে। এই পানীয়ের চাহিদা যতটা ব্যক্তিগত, ততটাই বৈশ্বিক। চা উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চা শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামের মতো শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও চা উৎপাদনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে। তবে শীর্ষ পাঁচের তালিকায় বাংলাদেশ এখনও নেই, তবুও এর সম্ভাবনা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের চা শিল্প একদিকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে বৈশ্বিক বাজারেও স্থান করে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম চা বাগান

চা উৎপাদনের ইতিহাস দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ। ১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৪৩ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রথম চা তৈরি এবং পান করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে প্রথম সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদীর উপত্যকা তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) চা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে (সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলায় )।

অর্থাৎ বলা যায় স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশ চা উৎপাদন করে আসছে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১.৩৮ মিলিয়ন কেজি। ২০২১ সালে দেশে রেকর্ড ৯৬.৫১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। ২০২২ সালে ৯৩.৮৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে (পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারি) রেকর্ড পরিমাণ ১৭.৭৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্র চা বাগানগুলো থেকে রেকর্ড পরিমাণ মোট ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে চা রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি চা উৎপাদনকারী দেশ:

চীনের চা বাগান

সর্বপ্রথম চীনারাই চা পানের প্রচলন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। খ্রিষ্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে চীনের ইউনান প্রদেশে একটি ঔষধি পানীয় হিসাবে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছিলো। উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে চীন। চীনের বার্ষিক চা উৎপাদন গড়ে ৩১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি, যার বাজারমূল্য ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। মূলত কয়েক শতাব্দী ধরেই চা চীনের জাতীয় পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং এমনকি ধর্মীয় কারণে সমগ্র চীনে এটি তুমুল জনপ্রিয়। তাই, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ২০২৩ সালে চীন প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে।

ভারতের চা বাগান

ব্রিটিশরা ১৮০০ দশকের গোড়ার দিকে ভারতে চা ব্যবহার ও উৎপাদন করা শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা শুরু করে, তখন এই চা ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকদের পানীয়। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। দেশটিতে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চা উৎপাদিত হয়। তবে বিশ্বব্যাপী ভারতের যেসব চা অনেক বেশি জনপ্রিয়, তার উৎপত্তিস্থল দার্জিলিং-এ। দার্জিলিং টি-ই ভারতের প্রথম পণ্য, যা ২০০৪-২০০৫ সালে প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

কেনিয়ার চা বাগান

চা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ কেনিয়ার নাম। কেনিয়াতে বছরে সাধারণত পাঁচ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। যদিও ২০২৩ সালে দেশটিতে তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম চা উৎপাদিত হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে মোট উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল চার লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু ও গাঢ় লাল মাটির কারণে চা উৎপাদনের জন্য কেনিয়া এক স্বর্গভূমি। কেনিয়ায় উৎপাদিত চা বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। বলা হয়ে থাকে, চা-ই হলো কেনিয়ার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়া থেকে ৪৫টিরও বেশি দেশে চা রপ্তানি করা হয়েছিলো।

শ্রীলঙ্কার চা বাগান

বিশ্বব্যাপী চা শিল্পে চতুর্থ স্থান দখল করে আছে শ্রীলঙ্কা। সিংহল চা বা সিলন চা নামে পরিচিত এই চা আন্তর্জাতিক বাজারে সুপরিচিত। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে আড়াই লাখের বেশি মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি বছরের শুরুর তিন মাসেই সেখানে ৫৮ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদন করা হয়েছে। জানা যায়, ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিলো, তার প্রায় দুই লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন চা রপ্তানি করা হয়েছে।

ভিয়েতনামের চা বাগান

চা উৎপাদনে বিশ্বের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের ব্ল্যাক ও গ্রিন টি’র খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তবে ভিয়েতনামের সবুজ চা’র কদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই দেশটি লোটাস (পদ্ম) ও জেসমিন (জুঁই) চায়ের জন্যও বিখ্যাত। ২০২৩সালে দেশটিতে এক লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়, তার আগের বছরের তুলনায় চা এক লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। ওই বছর দেশটির ১২৩ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিলো। ২০২৪ সালের ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চা উৎপাদন করেছে বলে ধারণা করা হয়।

বাংলাদেশের চা বাগান


বাংলাদেশের চা শিল্পের অগ্রগতি এবং বর্তমান অবস্থান বিশ্ববাজারে উল্লেখযোগ্য হলেও শীর্ষ পাঁচটি দেশের তুলনায় পিছিয়ে। চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম।
বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো হলো তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, জাপান ও থাইল্যান্ড।
বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে মোট ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি (১ লক্ষ টনের কিছু বেশি) চা উৎপাদিত হয়েছে। যদিও এই উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলক কম, তবে দেশীয় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক এবং রপ্তানির সম্ভাবনাও উন্নতির দিকে। তবে ২০০১ সালের সাথে তুলনা করলে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ের মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবার,১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি।


বাংলাদেশের চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশীয় এবং বৈদেশিক উভয় বাজারে চা শিল্পের অবদান প্রশংসনীয়। চা উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিও উন্নতি লাভ করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের চা রপ্তানি থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হয়। এভাবে চা শিল্প দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশের চা শিল্প প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।। বিশেষ করে সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে কয়েক লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। এ শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য, কারণ প্রায় ৭০-৮০% চা শ্রমিকই নারী। এই শিল্প গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি প্রধান মাধ্যম এবং এর সাথে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নও যুক্ত।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের বিশাল চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর দেশজুড়ে প্রায় ৮৫-৯০ মিলিয়ন কেজি চা খরচ হয়। ফলে দেশীয় বাজারে উৎপাদিত চা থেকে বড় অংশের রাজস্ব আসছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশে বেসরকারী খাতের উদ্যোগে চা উৎপাদন, বিপণন ও বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

চা উৎপাদন থেকে শুরু করে তা রপ্তানি করার জন্য চা পরিবহন, প্যাকেজিং এবং লজিস্টিক শিল্পের প্রয়োজন হয়। চা শিল্পের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহন খাত ও লজিস্টিক কোম্পানিগুলোরও আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মোট অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই খাতের উপর নির্ভরশীল বহু প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থান সরাসরি চা শিল্পের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত।

বাংলাদেশের চা শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে অর্গানিক চা উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে। এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আবার বাংলাদেশ সরকারের জন্য চা শিল্প থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আসে। সরকার চা উৎপাদন ও বিপণনের ওপর বিভিন্ন শুল্ক এবং ট্যাক্স আরোপ করে। পাশাপাশি চা শিল্পের সুরক্ষায় বিভিন্ন সরকারি নীতি ও প্রণোদনা প্রদানের ফলে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের চা বাগানগুলো পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে চা বাগানের পরিবেশ পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে। পর্যটনের এই খাতও দেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের অবদান বাড়াতে সহায়ক।
তাছাড়া ভবিষ্যতে চা শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও বেশি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারে।


তবে বাংলাদেশের চা শিল্পে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা এই খাতের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। যেমন বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে চা উৎপাদন প্রভাবিত হচ্ছে। কারণ অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং খরার কারণে চা গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির অভাবের কারণে চা বাগানে উৎপাদন পদ্ধতি এখনও অনেকাংশে পুরনো কায়দায় চলছে। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এটি দেশের একটি প্রধান শিল্প হওয়া সত্ত্বেও চা শ্রমিকদের মজুরি কম হওয়ার কারণে তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন, ফলে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।
ভারতের আসাম ও দার্জিলিং, শ্রীলঙ্কা এবং কেনিয়ার মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের বিশাল অংশ দখল করে রাখার ফলে বাংলাদেশের চা বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বাংলাদেশের চা রপ্তানির বাজার সীমিত। এজন্য নতুন বাজারে প্রবেশ করতে না পারলে রপ্তানি বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। সরকারের পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা এবং যথাযথ পরিকল্পনার অভাব চা শিল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রমিকদের মজুরি ও জীবনমানের উন্নতি, এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজন।বাংলাদেশের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তবে উন্নয়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তাছাড়া, নতুন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে।এজন্য সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।


বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানি হচ্ছে পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে। এছাড়াও চা উৎপাদনে মাঠ থেকে শুরু করে কাপে চুমুক দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রমিকদের পরিশ্রম ও ত্যাগ রয়েছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের সমৃদ্ধ ইতিহাস বিশ্ব চায়ের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে না পারলেও এর সম্ভাবনা অসীম। সঠিক পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ বিশ্বের চা শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে পারে। সরকারের সহায়তা, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের চা শিল্প আরও শক্তিশালী হতে পারে।

Tags

- Advertisement -