সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের জামিন আদেশ

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অবশেষে জামিন পেয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় কারাভোগ করতে থাকা এই সাংবাদিকের জামিন আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মঞ্জুর করেছেন। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফয়েজ আহম্মেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহম্মেদ জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল মামলায় দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন এবং সেই সাথে জামিন আবেদন করেছেন। আদালত শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করায় মাহমুদুর রহমানের কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই।

মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট, যখন ঢাকার পল্টন থানায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট এ মামলায় পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন মাহমুদুর রহমান ছাড়াও প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তাঁর ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।

তবে শফিক রেহমান ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে তাঁদের আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে হবে। শফিক রেহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর শফিক রেহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং রায়ের অনুলিপি পাওয়ার আবেদন করেন। অনুলিপি পাওয়ার পর তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মাহমুদুর রহমান মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর হওয়ায় এখন কারামুক্তির পথে তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে তিনি একাধিকবার কারাবন্দি হয়েছেন এবং তাঁর মুক্তি প্রতিবারই গণমাধ্যম ও রাজনীতির জগতে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলা রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই মামলার প্রধান দুই আসামি মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান দুজনেই সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং তাদের এই দণ্ড দেশব্যাপী পেশাগত স্বাধীনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, মামলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিরাও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।

এ ঘটনাটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মামলাটি গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব ও মুক্ত মত প্রকাশের অধিকারকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে।

মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর হওয়া তার জন্য যেমন স্বস্তির বিষয়, তেমনি মামলার অন্যান্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্যও একটি ইতিবাচক সংকেত হতে পারে।

Tags

- Advertisement -