যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর শ্রমিকদের আন্দোলন প্রত্যাহার, মজুরি বৃদ্ধি এবং শিপিং খাতের সংকট

যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর শ্রমিকদের আন্দোলন শেষ হয়েছে, যখন তারা মজুরি সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছায়। বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল লংশোরমেন’স অ্যাসোসিয়েশন (আইএলএ) এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে হওয়া আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। এতে করে দেশটির পূর্ব উপকূল ও গালফ কোস্টের বন্দরগুলোতে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে দুই দিন ধরে স্থগিত ছিল। এই আন্দোলন শেষ হওয়ায় বন্দরগুলোয় পণ্যজট নিরসনের জন্য এখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, এই জট কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।

ধর্মঘটের ফলে বন্দরগুলোতে প্রায় ৫৪টি কনটেইনার জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এই পণ্যজট দ্রুত নিরসন করা না হলে বিভিন্ন পণ্য, যেমন ফলমূল এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইস্টার্ন অ্যানালিটিক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দরগুলোর পণ্য প্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। মূল্য নির্ধারণ প্ল্যাটফর্ম জেনেটার প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড জানিয়েছেন, “জাহাজগুলো বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। শুধুমাত্র জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করাই নয়, সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও সময় প্রয়োজন হবে।”

ধর্মঘটের কারণে পণ্যজট এবং কার্গো খরচ বৃদ্ধির প্রভাব এশিয়ার পুঁজিবাজারেও পড়েছে। শিপিং কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলেও ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর তা আবার কমে গেছে। এই চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়া এবং ইউরোপের শিপিং কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম হ্রাস পেতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী অন্যতম বড় শিপিং কোম্পানি এ.পি. মোলার-মায়েরস্কের শেয়ারের দাম ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যায়, যা কোম্পানিটিকে ইউরোপীয় স্টক সূচক এসটিওএক্সএক্স-৬০০ তে সর্বনিম্ন অবস্থানে নিয়ে এসেছে। একইভাবে, জার্মানির হ্যাপাগ-লয়েডের শেয়ার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সুইজারল্যান্ডের কুহনে উন্ড নাগেলের শেয়ারদর ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়।

জাপানের শিপিং কোম্পানিগুলোও এই ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না। নিপ্পন ইউসেন, যা একদিন আগে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, শুক্রবার ৯ শতাংশ দরপতনের শিকার হয়। অন্যদিকে, কাওয়াসাকি কিসেনের শেয়ার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যায়। মিতসুই ওএসকে লাইনসের শেয়ারের মূল্যও ৭ শতাংশ হ্রাস পায়, যদিও এটি গত ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শিপিং কোম্পানি এইচএমএম এবং তাইওয়ানের এভারগ্রিন মেরিন, ওয়ান হাই লাইনস এবং ইয়াং মিং মেরিনের শেয়ার ৮ দশমিক ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যা তাদের জন্য কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতনের ঘটনা। 

ধর্মঘট প্রত্যাহার এবং চুক্তি স্বাক্ষরের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের জন্য এটি একটি বড় বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে। তারা ছয় বছরে প্রায় ৬২ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার ফলে শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি গড় মজুরি ৩৯ ডলার থেকে বেড়ে ৬৩ ডলারে উন্নীত হবে। যদিও এই চুক্তি শ্রমিকদের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে, শিপিং খাতে এর প্রভাব খুব শীঘ্রই কাটবে না। বন্দরগুলোতে সৃষ্ট জট এবং বিশ্বব্যাপী শিপিং কোম্পানিগুলোর শেয়ারের পতন স্পষ্টতই দেখাচ্ছে, সরবরাহ শৃঙ্খল পুনরায় সচল হতে সময় লাগবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন বন্দর শ্রমিকদের আন্দোলন এবং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে শিপিং খাতের আরও পরিবর্তন ঘটতে পারে।

Tags

- Advertisement -