উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ১৪ জন

উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের অশান্ত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন পাকিস্তানি সেনা ও আটজন বিদ্রোহী। সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং শনিবার জানায়, নিহত সেনাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ আলী শওকাতও রয়েছেন, যিনি বিদ্রোহীদের দমনে চলমান অভিযানে এক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছিলেন। 

প্রথম সংঘর্ষটি ঘটে উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায়, যেখানে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রাতভর লড়াই হয়। এতে ছয় সেনা সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ আলী শওকাত উল্লেখযোগ্য, যিনি বিদ্রোহী প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এছাড়া এ সংঘর্ষে ছয় বিদ্রোহীও নিহত হয় বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, “পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদের হুমকি মূলোৎপাটনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের সাহসী সেনাদের এই আত্মত্যাগ জাতির সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে।”

একই দিনে, খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াত জেলায় আরেকটি অভিযানে দুই বিদ্রোহী নিহত হয়। সেনাবাহিনী জানায়, নিহতদের একজন চলতি মাসে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের একটি কনভয়ের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। সন্ত্রাসবিরোধী এই অভিযানের ফলে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশেষত উত্তর ওয়াজিরিস্তান ছিল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি, যা পাকিস্তান তালেবান নামেও পরিচিত। যদিও সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা এই অঞ্চলের বিদ্রোহী কার্যকলাপ বন্ধ করতে সফল হয়েছে, মাঝে মাঝে সহিংস আক্রমণ আবারও সংঘটিত হওয়ায় এলাকাটি নতুন করে বিদ্রোহীদের সংগঠনের আভাস দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে টিটিপি, আফগানিস্তানের তালেবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায়, সেখানে আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। যদিও পাকিস্তান তালেবান আফগানিস্তানের তালেবানদের থেকে আলাদা, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তানের তালেবানরা ২০২১ সালে দেশটির ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার পর থেকেই পাকিস্তান তালেবান উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।

২০২৩ সাল এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য একটি রক্তাক্ত বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ৯৩০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিরাপত্তা কর্মী। এছাড়া প্রায় ২,০০০ জন আহত হয়েছে বিভিন্ন আক্রমণে। মার্চ মাসে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে বিদ্রোহীরা একটি সামরিক চৌকিতে আত্মঘাতী হামলা চালায়, যাতে সাতজন সেনা সদস্য নিহত হন। এ ধরনের আক্রমণগুলো উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং পাকিস্তানের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

সন্ত্রাসবিরোধী এই অভিযানগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও, বিদ্রোহীদের পুনর্গঠন এবং আক্রমণের ধারাবাহিকতা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে।

Tags

- Advertisement -