ডেবেনহ্যামসের কাছে ১০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া আদায় না হলে মামলার হুমকি

বাংলাদেশের ৩৬টি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম পোশাক বিক্রেতা ডেবেনহ্যামসের কাছে বকেয়া ১০ মিলিয়ন ডলারের দাবি জানিয়েছে। এই দাবির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধ করা না হলে ডেবেনহ্যামসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘোষণাটি আসে ঢাকার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।

ডেবেনহ্যামস, যার পোশাক বিক্রেতা হিসেবে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ ১৫০ বছরের ইতিহাস রয়েছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাবের কারণে দেউলিয়া ঘোষণা করে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, যারা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছিল, এখনো তাদের ১০ মিলিয়ন ডলারের পাওনা আদায় করতে পারেনি।

ডেবেনহ্যামস ভেন্ডরস কমিউনিটির আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, “গত চার বছরে আমরা ৬০ মিলিয়ন ডলার আদায় করতে পেরেছি, তবে এখনো ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়া রয়েছে। আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে ইএফএলের (এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেড) গাফিলতির কারণে বাকি অর্থ আদায়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “ফরওয়ার্ডার এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেডের ভুল ও দায়িত্বহীনতার কারণে আমরা এখনও পুরো বকেয়া ফেরত পাইনি। আইন অনুসারে, ইএফএলই এখন এই বকেয়া পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ।”

ডেবেনহ্যামসের দেউলিয়া হওয়ার আগে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিক্রয় চুক্তি অনুসরণ করে আসছিলেন, যার মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি ও তার শর্তাবলী নিশ্চিত করা হয়েছিল। রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকে জমা হওয়ার পর বিল অব লেডিং ইএফএলের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম মেনে তারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।

২০২০ সালের ৯ এপ্রিল, ডেবেনহ্যামস যুক্তরাজ্যের আদালতে দেউলিয়া হওয়ার জন্য আবেদন করলে, আদালত প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ প্রশাসকের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকরা একত্রিত হয়ে ‘ডেবেনহ্যামস ভেন্ডরস কমিউনিটি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করে।

জাহাঙ্গীর আলমের মতে, “আমাদের সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, বন্দর ও ট্রানজিটে আটকে থাকা পণ্যগুলোর বিষয়ে আলোচনা করা, বকেয়া আদায়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং সম্মিলিতভাবে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।”

তিনি আরও জানান, এই ৩৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর মধ্যে অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এই বিশাল আর্থিক ক্ষতি বহন করতে অক্ষম। “যথাসময়ে বকেয়া পরিশোধ না হলে আমরা অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হবো,” যোগ করেন তিনি।

ডেবেনহ্যামসের দেউলিয়া হওয়ার প্রক্রিয়ার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পাওনা আদায় একটি কঠিন চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। তবে এই সংগঠনটি দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে বাকি পাওনা আদায় নিশ্চিত হয় এবং তারা আইনি পথে সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়।

এই বকেয়া অর্থ না পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আইনি অধিকারের প্রয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

Tags

- Advertisement -