দুর্নীতি ও সরকারি বাধায় এনজিওগুলোর কাজ ব্যাহত : ড. দেবপ্রিয়

দেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) কার্যকরভাবে কাজ করতে গিয়ে বারবার দুর্নীতি ও সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আজ রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ৭৮টি এনজিও’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে ড. দেবপ্রিয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, এনজিওগুলোর কাজের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং সরকারি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি। তিনি বলেন, “ডিসি, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অনেক সময় এনজিও কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, যার পেছনে দুর্নীতি একটি বড় কারণ। এই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দূর না করলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের কর্মে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।”

দেবপ্রিয় আরও বলেন, দেশের উন্নয়নে এনজিওগুলোর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাদের স্বীকৃতি বরাবরই অনুপস্থিত ছিল। তিনি বলেন, “এনজিওরা দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তাদের কোনো স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের এই অবদান সম্পর্কে সচেতন নয়।”

ড. দেবপ্রিয়ের মতে, এনজিও প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় দুর্নীতি ও প্রশাসনিক বাধা ক্রমাগত তাদের কাজকে জটিল করে তুলছে। বিভিন্ন সময় তাদের কার্যক্রম ছোট করে আনতে নানা মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা এনজিও কর্মীরা বিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন।

নারী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণাও এনজিওগুলোর কার্যক্রমে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, “এনজিওরা মনে করে যে, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক আচরণ দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা।” এসব বিষয় শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, এনজিওগুলোর কার্যক্রমে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা দূর করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া বৈঠকে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী—বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, সমতল ও পাহাড়ি আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, শিশু শ্রম এবং বাল্যবিবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সরকারি আর্থিক সেবা যেমন ভাতা প্রদান ও উপবৃত্তি প্রদানে বিদ্যমান দুর্নীতির সমাধান করার কথাও বলা হয়।

ড. দেবপ্রিয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এনজিওগুলোর এই মতামতগুলো সরকারকে পরামর্শ আকারে দেওয়া হবে এবং এগুলো শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “সরকারি ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ, কার্যকর এবং দক্ষ না হলে, দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

Tags

- Advertisement -