সিআইসির কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে নতুন তৎপরতা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) প্রধান লক্ষ্য হলো বড় আকারের কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। তবে সিআইসি প্রায়শই বিশেষ গোষ্ঠীর কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে থাকে, যা ক্ষমতাসীনদের তদবির ও হুমকি-ধমকির ফলস্বরূপ ঘটে। সিআইসিকে দুর্বল করে রাখার অভিযোগও শোনা যায়, যেখানে অনেকে অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে ছাড় পেয়ে যান। এসব অভিযোগের পরও, সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে সিআইসি অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা আরও বড় আকারে কাজ করতে আগ্রহী, তবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও জনবল স্বল্পতার কারণে সেই আগ্রহ পূর্ণতা পায়নি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর, সিআইসি দেশের শীর্ষ সাতটি কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর বন্ধে আরজেএসসির নিবন্ধকের কাছে আবেদন পাঠায়। চিঠিতে সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব স্বাক্ষর করেন, যাতে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির শেয়ার বেচাকেনাসহ যেকোনো ধরনের হস্তান্তর বন্ধের অনুরোধ করা হয়েছে। সিআইসি এখন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আমলাদের কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে।

সিআইসি আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কেবল কাস্টমস সম্পর্কিত কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে কাজ করে, যখন মূল্য সংযোজন করের (মূসক) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মূসক সম্পর্কিত কর ফাঁকি অনুসন্ধান করে। বর্তমানে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বণিক বার্তাকে জানান, রাজস্ব সংগ্রহ করা এনবিআরের মূল কাজ এবং সিআইসির প্রধান কাজ হচ্ছে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন। তিনি উল্লেখ করেন যে, জনবল বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং আপাতত তারা কম জনবল দিয়েই কাজ করার চেষ্টা করছেন। সিআইসিকে দুর্বল করে রাখার জন্য কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রশ্নাতীত এবং সিআইসিকে শক্তিশালী করা হবে।

এনবিআরের কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিআইসি অনুসন্ধান করতে পারবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান জানান, সব করদাতাই সমান এবং এখানে বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। সিআইসিকে সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত জনবল সংযুক্ত করে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

সাম্প্রতিক সময়ে ৪৭৬ জন কর পরিদর্শককে বিভিন্ন কর অঞ্চলে বদলি করা হলেও সিআইসিতে একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান জানান, বিষয়টি তারা দেখছেন।

সিআইসির একজন সাবেক মহাপরিচালক বণিক বার্তাকে জানান, সিআইসির কার্যক্রম গুণগত হবে, অর্থাৎ তারা গণহারে নয় বরং বেছে বেছে কাজ করবে। রাজস্ব সংগ্রহই হবে সিআইসির মূল লক্ষ্য এবং কর্মকর্তাদের নিয়েও অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জনবল বাড়িয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাবেক মহাপরিচালক জানান, আগেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা ছাড়া সেটি করা সম্ভব নয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সিআইসির ডিজি সরাসরি এনবিআর চেয়ারম্যানের অধীনে পরিচালিত হন। বর্তমানে সিআইসিতে আয়কর ক্যাডারের একজন কমিশনার, তিনজন যুগ্ম কমিশনার, একজন অতিরিক্ত কমিশনার, তিনজন উপকর কমিশনার, একজন সহকারী কর কমিশনার ও চারজন কর পরিদর্শক এবং কাস্টমস ক্যাডারের একজন যুগ্ম কমিশনার, একজন অতিরিক্ত কমিশনার, চারজন উপকমিশনার ও চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) কর্মরত রয়েছেন।

সিআইসির কার্যক্রমে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের কার্যকর ভূমিকা রাজস্ব সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যদি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সমর্থন পাওয়া যায়।

Tags

- Advertisement -