দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাং এর নোবেল জয় বিশ্ব সাহিত্যে নতুন দিগন্ত

দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক। এই পুরস্কার তাকে দেয়া হয়েছে তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্য, যেখানে তিনি মানবজীবনের গভীরতম দুঃখ-কষ্ট এবং ঐতিহাসিক ট্রমার চিত্র তুলে ধরেছেন। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তার গদ্যকে “কাব্যিক” বলে অভিহিত করেছে এবং বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে তার লেখায় মানব জীবনের ভঙ্গুরতা ও অতীতের নিষ্ঠুরতার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মার টানাপোড়েনের প্রতি এক বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

হান কাং জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গওয়াংজু শহরে। তিনি সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছেন, বিশেষ করে তার ২০১৬ সালের উপন্যাস দ্য ভেজেটেরিয়ান তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এই উপন্যাসটি দিয়ে তিনি প্রথম কোরিয়ান হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার অর্জন করেন, যা তাকে বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। দ্য ভেজেটেরিয়ান মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস, যেখানে মানবশরীর এবং জীবনের ভঙ্গুরতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি তার আরও উল্লেখযোগ্য কাজ হলো হিউম্যান অ্যাক্টস, যা কোরিয়ার ইতিহাসের একটি মর্মান্তিক অধ্যায় নিয়ে লেখা। এই উপন্যাসটি ১৯৮০ সালের গওয়াংজু বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ও ব্যক্তিগত ভোগান্তির এক গভীর চিত্র তুলে ধরে। দ্য হোয়াইট বুক নামক আরেকটি উপন্যাসে তিনি মানবজীবন এবং মৃত্যুর সীমারেখা নিয়ে গভীরভাবে কাজ করেছেন, যা ২০১৮ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তার সাম্প্রতিক রচনা আই ডু নট বিড ফেয়ারওয়েল (২০২১) তাকে ফ্রান্সের প্রিক্স মেডিসিস পুরস্কার এনে দেয়, যা বিদেশি সাহিত্যে অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।

হান কাং-এর সাহিত্যে মানব শরীর ও আত্মার সংযোগ এবং জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তার রচনাশৈলীতে কোরিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে যেসব ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে অজানা বা উপেক্ষিত, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নোবেল কমিটি তার কাজকে “ইতিহাসের ট্রমা ও অদৃশ্য সামাজিক নিয়মাবলীর মোকাবেলা” বলে বর্ণনা করেছে, যা তার প্রতিটি রচনায় প্রতিফলিত হয়।

এই পুরস্কারটি কেবলমাত্র হান কাং-এর ব্যক্তিগত অর্জন নয় বরং এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্যাঙ্গনের জন্যও এক বিশাল প্রাপ্তি। এর আগে কেবলমাত্র কিম ডে-জুং ২০০০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছিলেন, কিন্তু সাহিত্যে এই প্রথমবারের মতো কোরিয়া এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করল।

হান কাং-এর এই অর্জন কোরিয়ার সাহিত্যিক অঙ্গনে নতুন উচ্চতা এনে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্যে কোরিয়ান ভাষার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

Tags

- Advertisement -