অবসরে থাকার পরও টাকা পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ভবানীপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অবসরে গেছেন। অবসরের প্রায় দেড় বছর পরও তিনি প্রাপ্য অবসর সুবিধার টাকা পাননি। গত ৮ অক্টোবর, তিনি রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে যান। এখানে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে তিনি তার পাওনা টাকা চাইতে গিয়েছিলেন।

ব্যানবেইস ভবনের নিচতলায় সাদীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর এপ্রিলে তিনি অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো টাকা পাচ্ছেন না। সাদীদুল ইসলাম বর্তমানে স্ট্রোক করে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও তার অর্থ উদ্ধার হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে তার স্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ জোগাতে ফকির হয়ে গেছি।’

শুধু শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম নন। আবেদন করে বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। এই শিক্ষকেরা কর্মজীবনের শেষে প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার কারণে গভীর কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমান সরকারের পরিবর্তনের ফলে অবসর সুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন না হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কারণ, গত সরকারের সময় গঠিত বোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তিরা বর্তমানে অফিস করছেন না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা পেতেও অপেক্ষার সাথে কষ্ট ও ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে।

দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কল্যাণ সুবিধার টাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়। অন্যদিকে অবসর সুবিধার টাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান মন্তব্য করেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পরপরই যেন তাদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

নিয়মানুযায়ী, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অবসর সুবিধা বোর্ডের সূত্রমতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন এবং তারা অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলোর নিরীক্ষা সম্পন্ন হলেও তহবিলের অভাবে অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে যে টাকা কেটে রাখা হয় তা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর মহাপরিচালক পদে নিয়মিত কোনো ব্যক্তির নিয়োগ নেই। এ পরিস্থিতির কারণে জমা হওয়া টাকা অবসর সুবিধা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

অবসর সুবিধার জন্য ৬ শতাংশ হারে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়। কিন্তু এই টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে জমা হওয়া ৩৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।

এদিকে, কল্যাণ সুবিধার জন্যও বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, এখানে দুটি সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। একটি হলো তহবিলগত সমস্যা এবং অপরটি ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এ জন্য প্রতিবছর সরকারের নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিতে হবে, যা মূলধন হিসেবে থাকবে।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পর তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা যাতে সময়মতো নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

Tags

- Advertisement -