অর্থনৈতিক সংকটের পরেও ১৩ শতাংশ বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে। আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। তবে এসব সংকটের মধ্যেও দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মোট ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে বাংলাদেশে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। তুলনায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই সময়ের এফডিআই ছিল ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এফডিআই বৃদ্ধির সত্ত্বেও আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মোট ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসলেও বছরের শেষে এফডিআই স্থিতি বা অবস্থান কমে গেছে। ২০২২ সালেও এমন একটি প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে আগের বছরের তুলনায় এফডিআই কম ছিল। অর্থাৎ, গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, বাংলাদেশে যেখানে জিডিপির মাত্র দেড় শতাংশ আসে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে, সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১২ শতাংশের বেশি। এমনকি শ্রীলঙ্কাও অর্থনৈতিক সংকটের পর বৈদেশিক বিনিয়োগের হার ২০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো ছোট দেশগুলোর বিপরীতে বাংলাদেশ কেন এফডিআই আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে, তা বড় প্রশ্ন হিসেবে উঠছে।

সরকার অবশ্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার আশা করছে, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

সরকার বর্তমানে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার পরিকল্পনা থাকলেও ২০২৩ সালের হিসাব বলছে, আগের বছরের তুলনায় এফডিআই আরও কমেছে।

অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের উদ্বৃত্ত দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানির ব্যয় কমিয়ে রাখার সরকারি নীতির ফলেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নেওয়া আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও অনুসরণ করেছে, যার সুফল হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের পণ্য-বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

সরকারের এই পদক্ষেপগুলো অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগের উন্নতি এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

Tags

- Advertisement -