রাজশাহীতে ৫৪০ কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে পাঁচ ফ্লাইওভার

রাজশাহী নগরীতে ৫৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচটি ফ্লাইওভার। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞ এবং নগরবাসী অনেকেই এই নির্মাণকে অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত হিসেবে বিবেচনা করছেন।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোসা ইলমী ফরিদাতুল বলেন, “ফ্লাইওভার প্রকৃতপক্ষে ট্রান্সপোর্টের একটি মেগাপ্রজেক্ট। যেখানে যানজটের সমস্যা প্রকট সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রাজশাহীর মতো শহরে যেখানে যানজটের সমস্যা নেই সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের কোনো যৌক্তিকতা নেই।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধুমাত্র অর্থের অপচয় নয়, বরং সামাজিক সমস্যাও তৈরি করছে।”

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের শেষদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্য ফ্লাইওভারগুলোতে ব্যয় ধরা হয়েছে হড়গ্রাম নতুন পাড়া সিটি বাইপাস সড়ক রেলক্রসিংয়ের ওপর ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বন্ধগেট রেলক্রসিংয়ের ওপর ৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, নতুন বিলসিমলা রেলক্রসিংয়ের ওপর ৮৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এবং শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ের ওপর ২৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

নগরবাসী নানা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাজশাহী শহরে কখনো সেভাবে যানজট তৈরি হয় না এবং বর্তমান গণপরিবহনগুলো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চলার উপযোগী নয়। ইয়ূথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন বলেন, “রাজশাহী একটি ছোট শহর যেখানে রিকশা ও অটোরিকশা ছাড়া বড় কোনো গণপরিবহন নেই। তবে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর যানজট বেড়ে গেছে কারণ এই প্রকল্পের কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের সম্পর্কে সাধারণ জনগণ অবগত নয় এবং তাদের সাথে পরিকল্পনা করা হয়নি। নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করেন, রাজশাহীর রাস্তার দুই পাশে সুউচ্চ ভবন রয়েছে, ফলে ফ্লাইওভার নির্মাণের পর ভবনগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়বে তা জানা নেই।

সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্দেশ্য হল ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসন করা। তবে ড. মোসা ইলমী ফরিদাতুল বলেন, “যখন একটি শহরে ব্যাপক শিল্পায়ন হয় এবং ভূমির ব্যাপক ব্যবহার হয় তখনই যানজট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাজশাহীতে এখনো এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই।”

এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, সরকারি নির্দেশনায় প্রকল্পের কিছু কাটছাঁট করেই ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রাজশাহী কোর্ট স্টেশন রেলক্রসিং ও বর্নালী মোড় রেলক্রসিংয়ের অংশে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আমরা আলোচনা করেছি এবং প্রকল্পের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ফলে বাতিল করার সুযোগ নেই। তবে যেগুলো প্রয়োজন নেই সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।”

সম্প্রতি, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত ৮১০ মিটার ফ্লাইওভারসহ ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু উন্মুক্ত হওয়ার পর দেখা গেছে, সড়কটির অংশ বিশেষ ব্যবহার হচ্ছে না।

সামগ্রিকভাবে, রাজশাহী শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে সরকারকে এ ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

Tags

- Advertisement -