আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার বিচার শুরু

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এই আন্দোলনের সময় যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোর বিচার অনেকদিন ধরে ঝুলে ছিল। বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর এই বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে।

আজ মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এক বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বিচারপতিদের সম্মানে আগামীকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে, যেখানে বিচারপতিরা প্রথমবারের মতো এজলাসে উপস্থিত হবেন। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ বিচার কাজ পরিচালনা শুরু করবে।

এই প্রক্রিয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন, যা সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে শুরু হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনটি সহিংসতায় রূপ নেয়, যেখানে অনেক ছাত্র এবং আন্দোলনকারীরা প্রাণ হারান। এই হত্যাকাণ্ডগুলো এখনও অনেকের স্মৃতিতে দগদগে ঘা হয়ে আছে। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, নিহতদের পরিবার এবং দেশবাসী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছে। এই বিচারকার্য শুরু হওয়া মানেই পুরোনো ক্ষতগুলোর নিরাময়ের পথ খোলা।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি আবেদন দাখিল করা হবে, যা বিচারকার্যকে আরও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় সহায়তা করবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে সোমবার ১৪ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ঘোষণা করে যে, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরীকেও ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়োগগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৬ ধারা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে এই নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিরা ট্রাইব্যুনালে প্রথম কর্মদিবস পালন করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ট্রাইব্যুনালে আসেন এবং সেখানে রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান। বিচারপতিদের এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।

এই প্রক্রিয়াটি শুধু মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা পূরণের প্রতীক। বহু বছরের প্রতীক্ষার পর এই বিচার শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এ ধরনের অপরাধের বিচার কেবল একটি দেশের আইন শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে না, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে একটি কার্যকর বার্তা পাঠায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ও পরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও অনেক সহিংসতা ঘটে, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে গভীর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য শক্তিশালী আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগের প্রয়োজন ছিল। এবার এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই প্রয়াস পূর্ণতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই বিচারকাজে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করছেন, যা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের গুরুত্বকেই তুলে ধরে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর, জাতির প্রত্যাশা থাকবে যে এটি একটি সুষ্ঠু, ন্যায্য এবং সঠিক বিচারপ্রক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হবে, যা এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের প্রয়োজন মেটাবে।

Tags

- Advertisement -