কানাডায় ছয় ভারতীয় কূটনীতিক বহিষ্কার

 

কানাডা এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আজ এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কানাডা ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে, যার মধ্যে হাই কমিশনারও রয়েছেন। কানাডা সরকারের অভিযোগ, এই কূটনীতিকরা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার সাথে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই পদক্ষেপের পেছনে একটি বিস্তৃত ভারতীয় অভিযানকে চিহ্নিত করেছেন, যা কানাডায় ভারতীয় ভিন্নমতাবলম্বী -দের টার্গেট করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

ভারতও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ছয়জন কানাডীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে। এতে অন্তর্বর্তীকালীন হাই কমিশনারও রয়েছেন। এই উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা এতটাই তীব্র হয়েছে যে, গত বছরের জুলাই মাসে ট্রুডো ভারতীয় এজেন্টদের সাথে নিজ্জারের হত্যার যোগসাজশের প্রমাণ দাবি করার পর থেকেই পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে শুরু করে।

ট্রুডো একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কানাডা সরকারের কাছে স্পষ্ট এবং উদ্বেগজনক প্রমাণ রয়েছে যে ভারত সরকার এজেন্টরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি।” তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় এজেন্টরা গোপন তথ্য সংগ্রহ, জোরজবরদস্তি এবং দক্ষিণ এশীয় কানাডিয়ানদের উপর সহিংস আচরণের সাথে যুক্ত। তিনি এও বলেন, “এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। ভারত অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে মৌলিক ভুল করেছে।”

ভারত অবশ্য এই অভিযোগগুলোকে বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডার পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, কানাডার বর্তমান সরকার তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম, তাই ভারত সরকার তাদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে।

রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) জানিয়েছে, ভারত সরকার কানাডায় ভারতীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত অভিযানের অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ড ও কালো টাকা আদায়ের মতো কার্যক্রমে জড়িত। আরসিএমপির সহকারী কমিশনার ব্রিজিট গৌভিন উল্লেখ করেছেন যে, “বিষ্ণয় গোষ্ঠী” নামক একটি সংগঠনের সক্রিয়তার কথা প্রমাণিত হয়েছে, যা ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের সাথে যুক্ত।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই ছয়জন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের পরই তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, “এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে।”

ভারত বলেছে, তারা কানাডায় তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম হওয়ার কারণে তাদের প্রত্যাহার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “আমাদের বিশ্বাস নেই যে বর্তমান কানাডিয়ান সরকারের প্রতিশ্রুতি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতের সন্ধানে নেই। তবে, আমরা চুপ করে বসে থাকব না যখন কোনো দেশের এজেন্টদের দ্বারা কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া হবে।”

এই উত্তেজনা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কানাডায় শিখদের সংখ্যা পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি, এবং এই সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ড ভারতের সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রও ভারতীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু এই সংঘাতের জেরে কানাডা-ভারত সম্পর্ক যে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তা পরিষ্কার। আগামী সপ্তাহে ভারতের একটি সরকারী কমিটি এই বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।

কূটনৈতিক এই উত্তেজনা কেবল কানাডা এবং ভারতের মধ্যে নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং ভারত ও পশ্চিমের সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিস্থিতি গভীর নজরদারিতে থাকবে, কারণ এটি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

Tags

- Advertisement -